গোয়াইনঘাট (সিলেট) থেকে ফিরে: দুর্গম হাওর এলাকায় প্রতিকুল পরিবেশের সঙ্গে শিক্ষক স্বল্পতা, অভিভাবকদের অসচেতনতায় গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের অভাব।
শিক্ষক স্বল্পতা পূরণের পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ করে তাদের দুর্গম ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা গেলে প্রাথমিক শিক্ষায় গুণমতমান অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৪ অক্টোবর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় সরেজমিনে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এবং গুণগত মান নিয়ে আলোচনা উঠার পর শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদরা এমন মত দিয়েছেন।
তারা বলছেন, শিক্ষক স্বল্পতায় ক্লাসে বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি গুণগত শিক্ষা অর্জন চ্যালেঞ্জ। নতুন নিয়োগ এবং পদোন্নতির জন্যও সুপারিশ তাদের।

undefined
গোয়াইনঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ১১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩৮টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৮টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের ৮৫টি পদের মধ্যে শূন্য ১৮টি, সহকারী শিক্ষকের (রাজস্ব) ৩৭৭ টির মধ্যে শূন্য ৪০টি, প্রাক-প্রাথমিকে ৬৮ টির মধ্যে শূন্য ১২টি, জাতীয়করণকৃত ১০৮ টি পদের মধ্যে ৩৪টি পদ শূন্য।
শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
পাশাপাশি সহকারী শিক্ষা অফিসারের ৬টি পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ২ জন। এতে বিদ্যালয় পরিদর্শনে বেগ পেতে হয়।
শিক্ষক, অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্গম এলাকায় শিক্ষার গুণগত মান অর্জনে শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে কাজ করা যেতে পারে।

undefined
ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম বলছেন, দুর্গম এলাকায় অনেক শিক্ষক স্থানীয় নয়। অন্য এলাকা থেকে এসে পড়ায়। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
দুর্গম ভাতা, শিক্ষকদের জন্য প্রত্যেক স্কুলে আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবে বলে জানান ড. শফিকুল ইসলাম।
পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জানা গেছে, এসব এলাকার অভিভাবকরা সচেতন নয়। এ বিষয়ে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির এই কর্মকর্তা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ শিক্ষা কমিটি কতটুকু কাজ করছে সেটা দেখতে হবে। স্থানীয়দের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আর স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয় করতে হবে যাতে তারা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি মনিটর করেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় কোন প্রতিষ্ঠানে স্কুল ফিডিং না থাকাকে প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন বিছানাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রাক্তণ সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান। আর উপবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি। বিদ্যালয়গুলোতে মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদারের সুপারিশও করেন।

undefined
দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলো স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলে জানান সিলেট প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক তাহমিনা খাতুন।
তিনি মনে করেন, সিলেটের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। হাওর এলাকার জন্য আলাদা ভাতা নেই, বাহন নেই। এর ব্যবস্থা করতে হবে।
দুর্গম ভাতা প্রদানের জন্য সংসদীয় কমিটিও সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়।
ওই সব এলাকায় শিক্ষকরা যেতে চায় না বলে স্বীকার করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আলমগীর।
দুর্গম ভাতা প্রদানের জন্য সংসদীয় কমিটিও সুপারিশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের উপজেলাভিত্তিক পদায়ন করা হলে এটার প্রয়োজন পড়ে না।
ওই এলাকায় পরিদর্শন ভাতা সবার দাবি থাকলেও সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয় বলে জানান মো. আলমগীর।

undefined
দুর্গম এলাকায় পরিদর্শনের জন্য যেতে না পারলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় বলে জানান ডিজি।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বর্তমানের ৭৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে আগামীতে এক কোটি ৩০ লাখ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, এতে দুর্গম এলাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় বলেন, আগামীতে উপবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, তখন সবাই এর আওতায় আসবে।
দুর্গম ভাতার বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৫
এমআইএইচ/জেডএম