ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৪৬ বছরের আবদুর রহমানের ঝুলিতে ২৫ মাস্টার্স ডিগ্রি

জুনায়েদ আহমেদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
৪৬ বছরের আবদুর রহমানের ঝুলিতে ২৫ মাস্টার্স ডিগ্রি আবদুর রহমান মিঞা

ঢাকা: আবদুর রহমান মিঞা। বয়স ৪৬ বছর।

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। কাজের পাশাপাশি এ বয়সেও চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫টি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন আবদুর রহমান। চলমান আছে আরও একটা। এখানেই থেমে থাকেননি। লিখেছেন বইও।

এক পড়ন্ত বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আড্ডা হয় আবদুর রহমানের সঙ্গে। গল্পের ছলে কথা হয় বিভিন্ন বিষয়ে।

এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন একের পর এক মাস্টার্স করছেন তিনি, উত্তরে আবদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই শেখে। শেখার কোনো শেষ নেই। মূলত শেখার জন্যই আমি একটার পর একটা মাস্টার্স করছি। আমাদের ধর্মেও জ্ঞান অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি যদি জ্ঞান অর্জন করি তাহলে আমার মানসিকতা বড় হবে বলে বিশ্বাস করি। মানুষকে সহযোগিতা করা সহজ হবে তখন।

মানব কল্যাণে কিছু করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এযাবৎ বারটিরও অধিক মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করেছি, যা আগ্রহীদের জন্য সহায়ক হবে এছাড়াও এখন পর্যন্ত ১০৫ ব্যাগ পূর্ণ রক্ত, করোনা অতিমারীতে নয় ব্যাগ প্লাজমা এবং মরণোত্তর চোখ দান করেছি।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল এ যুগে মানুষ মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার, স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকে। বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। হয়তো আমার দেখে আরও অনেকে উৎসাহিত হবে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।

আবদুর রহমান বলেন, আগের দিনে দেখা গেছে আমাদের এলাকাগুলোতে লাইব্রেরি থাকতো। সেখানে নানা প্রতিযোগিতা হতো। বিশেষ করে শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রগুলো এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। এখন আর এ বিষয়গুলো চোখে পড়ে না।

তিনি বলেন, আসলে আমি যদি না পড়ি, না জানি তাহলে এগিয়ে যেতে পারবো না। কারণ বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। আমি ম্যাথমেটিক্সে মাস্টার্স করেছি অনেক আগে। কিন্তু এখন অনেক বিষয়ই নতুন নতুন আসছে। তো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাকে এ বিষয়গুলোও জানতে হবে। আর এজন্য আমাকে পড়াশোনার সঙ্গে থাকতে হবে।  অর্থাৎ জীবনব্যাপী শিক্ষা তথা কগনিটিভ লার্ণিং বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে খুবই জরুরি। আরও একটা বিষয় হল লেখাপড়া বা জ্ঞানার্জন নিজে নিজে বই পড়েও হতে পারে কিন্তু এর জন্য আদর্শ স্থান হল ক্লাসরুম। আর আমি যা শিখেছি তা কতটুকু সঠিক তা জানার জন্য স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। তাই জ্ঞানার্জনের জন্য বিদ্যাপীঠের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কতদিন চালিয়ে যাবেন পড়াশোনা? তিনি বলেন, ইচ্ছে তো আছে যতদিন বাঁচি ততদিনই চালিয়ে যাওয়ার।

দৈনন্দিন কাজ করে এতকিছু করার সময় কিভাবে হয় উত্তরে তিনি বলেন, আমার দিন শুরু হয় নিয়ম করে পবিত্র কোরআন পাঠের মাধ্যমে।  তারপর সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। দিনশেষে বাসায় ফিরে রাত দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত লেখাপড়া করি।

অধিকসংখ্যক ডিগ্রি অর্জন করেছে আপনার জানামতে এমন কেউ আছেন? তিনি বলেন, ইতালীর লুসিয়ানো বায়েত্তি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পনেরটি এবং ভারতের শ্রীকান্ত জিচকর স্নাতক ও স্নতকোত্তর সতেরটি বিষয়ে।

শুনেছি আপনি বইও লিখেছেন, তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি পাঁচটি বই লিখেছি। সেগুলো হলো- ‘শ্রম অর্থনীতি ও ইপিজেড আইন’, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব : প্রস্তুতির এখনই সময়’, ‘শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও পারিবারিক শিক্ষা’, ‘লেবার ইকোনমিক্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অ্যাক্ট’, ‘অ্যা ম্যানুয়াল ইন্ট্রাকচুয়াল প্রপার্টি ল’।

বই লেখার কারণ কী? তিনি বলেন, আসলে বই লেখার মূল কারণ হচ্ছে মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে জানানো ও সচেতন করা এবং পাশাপাশি নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা।

আবদুর রহমানের দাদার বাড়ি মাদারীপুর হলেও তিনি জন্মেছেন চট্টগ্রামে। বাবার নাম আবদুর রব মিঞা। তিনি জেলা রিলিফ অফিসার ছিলেন। আর মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা। বাবা রিটায়ার্ড করার পর যশোরে বাড়ি করেছেন। এখন স্থায়ী ঠিকানা সেখানেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।