ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবার অধিকার: তানভীর এ মিশুক

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবার অধিকার: তানভীর এ মিশুক

নগদ। দেশের দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।

২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরুর পরেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। প্রথমবারের মতো চালু করেছে ডিজিটাল কেওয়াইসি। স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তীতে ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত হচ্ছে নতুন উদ্ভাবন। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরেই ধরতে চায় আরও ২০ শতাংশ গ্রাহক। এসব বিষয় নিয়ে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুকের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শাহেদ ইরশাদ

বাংলানিউজ: যারা এখনো ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন না তাদের কীভাবে সেবার আওতায় আনা যাবে?
তানভীর এ মিশুক: বিশ্বব্যাংকের জরিপে বলা হয়েছে, ৫২ শতাংশ অর্থ ফরমাল ব্যাংকিং সিস্টেমের আওতায় নেই। ক্যাশ আউট চার্জ কমাতে না পারলে ফরমাল ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্যে আনা সম্ভব হবে না। মানুষ এখনো বালিশের নিচে টাকা রাখে। এই ইনফরমাল টাকা যদি ফরমাল ইকোনোমিতে যোগ হয়, তাহলে জিডিপি কোথায় যাবে একটু চিন্তা করেন। ৫২ শতাংশ অর্থের মালিকরা কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্স দেয় না। এই অর্থ ব্যাংকিং সিস্টেমে আনতে হলে এমএফএস-এর বিকল্প নেই। কারণ ব্যাংকগুলোর অপারেটিং খরচ অনেক বেশি। প্রতিটি লেনদেনে খরচ হয় প্রায় ১৩০ টাকা। ১০-১০ হাজার টাকা জমা রাখার একটাই সহজ অপশন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এখানে একটি বড় বাধা হাজারে ২০ টাকা ক্যাশ আউট চার্জ। যেভাবেই হোক এটাকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে।

বাংলানিউজ: গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে নগদ কী পরিকল্পনা করছে?
তানভীর এ মিশুক: মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানে ‘নগদ’ বর্তমানে দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাজারের ৩০ শতাংশ ‘নগদ’-এর দখলে রয়েছে। আমরা এমএফএস সেবার একচেটিয়ে বাজার ভেঙে ফেলতে পেরেছি। ২০২১ সালে ‘নগদ’ বাজারের ৫০ শতাংশ দখল নিতে চায়। এটা দেশের জন্য করতে হবে। একজনের কাছে ৯০ শতাংশ বাজারের দখল থাকলে সবাই তার কাছে জিম্মি থাকে। ভারসাম্য দরকার। আমরা সেই সমান অবস্থানে যেতে চাই।  

বাংলানিউজ: ২০২১ সালে নগদকে কোথায় দেখতে চান?
তানভীর এ মিশুক: কাউকে ফলো করে কোনো ব্যবসা করা যায় না। সবারই স্বতন্ত্র নীতি থাকতে হয়। আর এমএফএস মার্কেটটা এমনভাবে সেট করা ছিল যে, কেউ ঢুকতেই পারত না। যেই ঢুকতো ৫০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে বন্ধ হয়ে চলে গেছে। প্রতিযোগী কোম্পানি যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রেখেছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে পারেনি।  

আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট ডাক বিভাগের ৮ হাজার সেন্টার। আমাদের প্রোডাক্ট এত আকর্ষণীয় করেছি, তার ফলে রিটেইলশপগুলো ভালো সেল করতে পারছে। ভালো মুনাফাও পাচ্ছে। যতগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল আমরা সবগুলো মোকাবিলা করে এগিয়েছি।

বাংলাদেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষার বৃত্তির অর্থ শতভাগ বিতরণ করেছে ‘নগদ’, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম বৃত্তি বিতরণ কার্যক্রম। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাতা বিতরণ প্রায় ৭৫ শতাংশ ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। আমাদের সেবা দ্রুত প্রদান করতে পারায় এটি সম্ভব হচ্ছে। সিকিউরিটির কারণে সরকার সব অর্থ বিতরণ ‘নগদ’-এর মাধ্যমে করছে। আশা করছি ২০২১ সালে সবাই ‘নগদ’-এর মাধ্যমেই লেনদেন করবেন।

বাংলানিউজ: প্রত্যন্ত গ্রামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
তানভীর এ মিশুক: মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এখনো জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অ্যাকাউন্ট করা কঠিন ছিল, খরচ অনেক বেশি ছিল। সেন্ড মানিতে এখনও চার্জ দিতে হয়। ক্যাশবাকের নামে শুভঙ্করের ফাঁকি। সাধারণ মানুষ তো এত কিছু চিন্তা করতে পারে না। ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে। সহজ-সরল এসব মানুষের কাছে প্রোডাক্টটাও নিট অ্যান্ড ক্লিনভাবে পৌঁছাতে হবে। তাই একমাত্র আমরাই স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফিচার ফোনে *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিচ্ছি। এ কারণে প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কাস্টমার ‘নগদ’-এ যুক্ত হচ্ছেন।  

বাংলানিউজ: খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কী করা উচিত?
তানভীর এ মিশুক: খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে হলে সেবার ধরণ অনুযায়ী চার্জ নির্ধারণ করতে হবে। যে আলু বিক্রেতা এক কেজি আলু বিক্রি করে ২ টাকা লাভ করে, তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা চার্জ আদায় করা যেতে পারে। এতে হোলসেলের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারাও এমএফএস সেবার আওতায় আসবেন। এ ছাড়া ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সীমা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সব তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের কেওয়াইসি অধিক নিরাপদ। তারপরও এমএফএসের জন্য লেনদেন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটা তুলে নেওয়া উচিত।

বাংলানিউজ: ইন্টারওপারোবিলিটি চালু করতে নগদ কী অবদান রাখবে?
তানভীর এ মিশুক: আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা ইন্টারওপারেবিলিটি সুবিধা না থাকলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই থাকবে না। গ্রাহককে একটি জায়গায় জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠাতে না পারলে সেই স্বাধীনতাটা আপনার নাই। এ জন্য আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা অবশ্যই চালু করা উচিত। আমরা প্রথম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে ইন্টারওপারেবিলিটি চালু করার প্রস্তাব দিয়েছি। আন্তঃব্যাংক লেনদেন অবশ্যই কোনো ধরনের চার্জ ছাড়া হতে হবে। বাংলাদেশ প্রথমে ৮ টাকা এবং ৪ টাকা চার্জ নির্ধারণ করেছিল। এমনিতেই এমএফএস ক্যাশ আউট চার্জ প্রায় ২০ টাকা। এই চার্জ বিশ্বের কোথাও নেই। প্রায় ২০ টাকা চার্জের সঙ্গে যদি আরও ৮ টাকা (এক হাজার টাকায় যদি ২৮ টাকা খরচ হয়ে যায়) আমাদের অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই সম্ভব না। আমি মনে করি, আগামীকালই ইন্টারওপারেবিলিটি চালু করা হোক। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে পরবর্তী ৫ বছর কোনো চার্জ ছাড়া এটি চালু রাখা যেতে পারে। এই জন্যই চাইছি যেন আমরা প্রধানমন্ত্রীর ভিশন আর্থিক অন্তর্ভূক্তিটা করতে পারি।  

উন্নত দেশ হওয়ার জন্য আর্থিক অন্তর্ভূক্তি ছাড়া কোনো অপশন নেই। কারণ প্রধান শর্তগুলোর একটি হচ্ছে মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে আনতে হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবার অধিকার। এভাবে হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ প্রায় ২০ টাকা নিলে মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে পারব না। এসব কারণে ক্যাশ আউট চার্জ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা উচিত।

বাংলানিউজ: এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী? 
তানভীর এ মিশুক: ক্যাশআউট চার্জ সিঙ্গেল ডিজিটলে নামিয়ে আনুন। যাতে প্রকৃত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন উন্নয়নশীল দেশ গড়তে একযোগে কাজ করুন। মুনাফা একটু কম করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুন।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাজারের ৫০ শতাংশ হতে চাই আমরা: তানভীর এ মিশুক

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২০

এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।