ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাজারের ৫০ শতাংশ হতে চাই আমরা: তানভীর এ মিশুক

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২১
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাজারের ৫০ শতাংশ হতে চাই আমরা: তানভীর এ মিশুক ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক

ঢাকা: দেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’ এর দিকে অগ্রসর হতে হবে বলে মনে করেন ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন এবং তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটালভাবে বাংলাদেশ একটি অবস্থানে পৌঁছেছে।

তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এগিয়ে থাকতে হলে সঠিক ‘ট্র্যাকে’ থাকতে হবে। আর সেই ট্র্যাকটি হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং।

সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে বাংলানিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেশের মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) খাত নিয়ে আলোকপাত করেন তানভীর এ মিশুক। দেশে এমএফএস খাতে ইতোমধ্যে এক ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা করেছে ‘নগদ’। এখন সেই বিপ্লবকে ‘নগদ’ দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিতে চায় বলে জানিয়েছেন তানভীর এ মিশুক।

‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ব্যাংকে যে কোনো একটি লেনদেন সম্পন্ন হতে ১৩০ টাকা খরচ হয়, এমএফএস-এ যেটা অনেক কম। এর ফলে একজন মাঝারি আকারের গ্রাহককে কিন্তু ব্যাংক তাদের সেবার জন্য নিরুৎসাহিত করে। এর ফলে অনেকেই ব্যাংকিং সেবা খাতের আওতার মধ্যে আসতে চান না। দেশের মানুষের ৫২ শতাংশ অর্থই আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আসে না। এর ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ‘নগদ’ সেই সমস্যারই একটা সমাধান দিয়েছে। ‘নগদ’-এ প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন। প্রায় তিন কোটি গ্রাহক এখন আমাদের সঙ্গে নিবন্ধিত আছেন।

মাত্র তিন মিনিটেরও কম সময়ে সফলভাবে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালুর প্রযুক্তি নিয়ে বিপ্লব দেখিয়েছে ‘নগদ’। ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দেওয়া এই প্ল্যাটফর্মটিই এমএফএস এ দিচ্ছে টাকা উত্তোলনে (ক্যাশ আউট) দেশের সর্বনিম্ন রেট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকের মতে, এই খাতের ভবিষ্যৎ হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং পদ্ধতি।

তানভীর এ মিশুক বলেন, এখনও একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে গেলে কয়েকপাতার বিশাল ফরম পূরণ করতে হয়। ভেরিফিকেশন, ছবি, বিভিন্ন ডকুমেন্টসসহ নানান আনুষ্ঠানিকতা। অথচ এক ‘নগদ’-এ একজন আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্য ‘ভেরিফাই’ করতে সময় লাগে মাত্র ১০ সেকেন্ড। মিনিটেরও কম সময়ে সফলভাবে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়। শুধু অ্যাপেই না বরং ইউএসএসডি শর্ট কোড ডায়াল করার মাধ্যমেও এটি সম্ভব। এমন কোনো প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথম আর সেটি হচ্ছে ‘নগদ’-এর। আমরাই দেশে প্রথম ডিজিটাল কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার) চালু করেছি।  

তানভীর এ মিশুক বলেন, কেউ নগদ অ্যাপে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিলে অথবা বাংলালিংক ব্যতীত অন্য যেকোনো অপারেটরের মোবাইল সিম দিয়ে *১৬৭# ডায়াল করলেই সেই সিমের জন্য নিবন্ধিত জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে তার পরিচয় আমরা যাচাই করতে পারি। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারেরই আরেকটি গেটওয়ে ‘পরিচয়’। এটা একটা বিপ্লবের মতো। আগে এজেন্টের কাছে যেতে হতো; সঙ্গে হাজারো ডকুমেন্টস নিয়ে। আর সেগুলো যাচাই বাছাই হয়ে অ্যাকাউন্ট চালু হতে হতে ৭ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতো। আর এখন সেই একই কাজ হয় চোখের পলকে, কয়েক মিনিটে।

এমএফএস প্ল্যাটফর্মে আর্থিক লেনদেন ব্যাংকের তুলনায়ও অনেক বেশি নিরাপদ বলে দাবি করেন তানভীর এ মিশুক। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সেটি দক্ষিণ কোরিয়াতে ডেভেলপ করা। বিশ্বের অন্তত ৮৩টি দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষায় আর্থিক লেনদেনে যে কোনো মাধ্যম ব্যবহারে গ্রাহকের সুযোগ থাকতে হবে বলেও মনে করেন ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেই সঙ্গে এমএফএস এ সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে টাকা উত্তোলনের চার্জ ‘এক অংকে’ নামিয়ে আনারও দাবি জানান তানভীর।

নতুন শুরু হওয়া ২০২১ সালে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান তানভীর। তিনি বলেন, এই বছরটি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০তম বছর। এই বছরই আমাদের বলবে ভবিষ্যতে ৫০ বছর পর আমাদের দেশটা কেমন হবে। তার জন্য আমাদেরকে আজ থেকেই কাজ করতে হবে; নীতিগত পর্যায়ে কাজ করতে হবে। বাজার থেকে মনোপলি (একচেটিয়া দখল) সরাতে হবে। ২০২১ সালে বাজারে আমরা অন্যদের সঙ্গে সমান পর্যায়ে আসতে চাই। আমরা চাই আমাদেরও প্রায় ৫০ শতাংশ বাজার দখলে থাকবে। একটা প্রতিষ্ঠানের কাছেই দেশের বেশিরভাগ টাকা থাকবে; এমনটা তো হতে পারে না। এমএফএস এবং আর্থিক সেবা দেওয়া এমন সব প্ল্যাটফর্মকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ব্যবসা তো এতদিন করেছেই সবাই। এখন প্রয়োজনটা দেশের; দেশের মানুষের।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের মার্চে চালু হয় বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’। প্রতিষ্ঠা এবং আনুষ্ঠিক কার্যক্রম শুরুর মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ে এমএফএস ব্যবহারকারীদের কাছে দ্রুতই আস্থা ও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে নগদে দৈনিক ২৫০ কোটিরও বেশি টাকা আর্থিক লেনদন করছেন গ্রাহকেরা। গুগল প্লে স্টোর থেকে নগদ- এর এন্ড্রয়েড অ্যাপ এখন পর্যন্ত ৭০ লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে। আর আইওএস প্ল্যাটফর্মে এই সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রাইমারি বৃত্তির টাকা এমএফএস-এর মাধ্যমে বণ্টনের শতভাগ কাজ পেয়েছে নগদ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন অনুদানের টাকার মধ্যে ৭৫ শতাংশই দিয়ে আসছে নগদ। সম্প্রতি ফিনটেক খাতে অবদান রাখার জন্য ফিনটেক ৫০ অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (উইটসা) সম্মেলনে, ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ‘নগদ’ পেয়েছে ‘উইটসা গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।