ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নাজিরারটেকে শুরু হয়েছে পুরোদমে শুঁটকি উৎপাদন

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
নাজিরারটেকে শুরু হয়েছে পুরোদমে শুঁটকি উৎপাদন শুঁটকি মহাল। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই কর্মচঞ্চলতা শুরু হয় কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে। এ বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও এখন পুরোদমে চলছে উৎপাদন।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে সংগ্রহ করা ছুরি, লইট্ট্যা, রূপচাদা, কোরাল, সুরমা, পোয়াসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির শুঁটকি এখানে শুকানো হয়। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ছুরি ও লইট্যা। তবে এ বছর উৎপাদন কম হবে বলে মনে করছেন নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ।

তিনি জানান, এ বছর সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তুলনামূলক কম। সে কারণে উৎপাদন কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।

কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেঁষে প্রায় ১০০ একর বালুচরজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। শুধুমাত্র সূর্যের তাপে বিভিন্ন ধরনের মাছ শুকানো হয় এখানে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নাজিরারটেক নয়, প্রতিবছরের মতো শীত মৌসুমের শুরু থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকূলীয় বিভিন্ন শুঁটকি মহালে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। সাগরের বেড়িবাঁধ এবং বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার ওপর পাতলা করে বিছিয়ে সূর্যের তাপে কাচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়।

সম্প্রতি নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি শুঁটকি মহালে শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাছ পরিষ্কার করছেন, কেউ মাচায় তুলছেন। কথা বলারও ফুসরত নেই তাদের।

শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. অলি উল্লাহ বাদশা বাংলানিউজকে জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে মাছ শুকাতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে এখন পুরোদমে উৎপাদন চলছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকানো হলেও এই চালানে ছুরি এবং লইট্ট্যা বেশি।

তিনি বলেন, বর্ষাকাল ছাড়া বছরের নয়মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে মাত্র কিছুদিন আগে সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এখন সাগর থেকে মাছ আসা শুরু হয়েছে।

প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই মহালে কাজ করেন রাশেদা বেগম (৪৫)। রাশেদা বলেন, সারাদিন কাজ করে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। এতেই টানাপোড়নের মধ্যে চলে সংসার।

তার বোন ছলিমা খাতুন বলেন, দৈনিক এবং মাঝে মাঝে কন্ট্রাক্টে আমরা কাজ করি। মজুরি তুলনামূলক কম, তবুও কি করবো, পেট তো চালাতে হচ্ছে। এভাবেই আমাদের দিন চলে যাচ্ছে। নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, নাজিরারটেক শুটকি মহালে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ত রয়েছে। এটিই দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল। এ মহাল থেকে  প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তবে করোনা মহামারী এবং সাগর থেকে মাছ কম ধরা পড়ার কারণে এ বছর উৎপাদন কম হতে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকতা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, শুধু কক্সবাজারে নয়, এখানে উৎপাদিত শুঁটকি দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। দেশের মানুষের প্রোটিনের বড় একটি অংশ কক্সবাজারে উৎপাদিত শুঁটকি থেকে পূরণ হচ্ছে। এমনকি শুঁটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে এখান থেকে।

শুটকিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এক সময় মাছের পচন রোধের জন্য এখানকার ব্যবসায়ীরা কীটনাশক ব্যবহার করতো বেশি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তাদের সচেতন করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
এসবি/এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।