ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ফিক্সড’ ভ্যাটের নামে প্রতারণা!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
‘ফিক্সড’ ভ্যাটের নামে প্রতারণা! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ‘ফিক্সড ভ্যাট’ ও ‘ভ্যাটে ডিসকাউন্ট (ছাড়)’ এর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট (মূসক) ফাঁকির অভিনব কৌশল খুঁজে পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
 
এর মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।

সম্প্রতি এনবিআরের মূসক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ফিক্সড ভ্যাট বলে কোনো ভ্যাট নেই। ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবেন। আর ভ্যাটে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
 
মূসক গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ফিক্সড ভ্যাট ও ভ্যাটে ছাড়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে ইতোমধ্যে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দারা অভিযান চালান সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে খাদ্য সরবরাহকারী ইকবাল ক্যাটারিং এর মোহাম্মদপুর অফিসে।

প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার খাবার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ হিসেবে দৈনিক প্রায় আড়াই লাখ টাকার ভ্যাট দেওয়ার কথা। কিন্তু দেয় না। দেয় না মূসক চালান। ইসিআর ব্যবহার করে না।
 
অভিযানে কাগজপত্র জব্দ করে গোয়েন্দারা ‘থ’। দৈনিক আড়াই লাখ টাকা তো দূরের কথা, মাসেও দেয় না। ‘ফিক্সড ভ্যাটের’ নামে মাসে ৫০ হাজার টাকা দিয়েই খালাস।
 
অভিযানে নেতৃত্বে থাকা একজন মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিক্রিতে মূসক চালান ও প্রতিমাসে মূসক দেওয়ার থাকলেও দেয় না প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি বলেন, দৈনিক আড়াই লাখ টাকা ভ্যাট দেওয়ার কথা। সে ভ্যাট তো প্রতিষ্ঠান নিজের আয় থেকে নয়, ভোক্তার কাছ থেকে নিয়ে দেবে। ২০১৩ সাল থেকে রেকর্ড পেয়েছি আমরা।

এ কর্মকর্তা বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকার ফিক্সড ভ্যাট দেয় প্রতিষ্ঠানটি, যা ভ্যাট আইনে নেই। এ প্রতিষ্ঠানের মতো বহু প্রতিষ্ঠান এভাবে ফাঁকি দিয়ে আসছে।
 
ইকবাল ক্যাটারিং এর ম্যানেজার সেলিম বলেন, মূসক চালান আছে, তবে ভোক্তারা নিতে চান না বলে তারা দেন না। ফিক্সড ভ্যাটের বিষয়ে মালিক জানেন, আমি জানি না।
 
অন্যদিকে ফখরুদ্দিন ক্যাটারিংয়ে অভিযান চালিয়েও কর্মকর্তাদের চোখ ছানাবড়া। দৈনিক ১৫-২০ লাখ টাকার খাবার সরবরাহ করলেও চালান-ইসিআর বিষয়ে অনিয়মের তথ্য পান তারা।
 
গোয়েন্দারা দেখেন, খাবার বিক্রি ও অর্ডারের ওপর দৈনিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ভ্যাট এলেও দেয় না ফখরুদ্দিন ক্যাটারিং। মাসে ৪৮ হাজার টাকা ফিক্সড ভ্যাট দেয়, যা ভ্যাট আইনে নেই।
 
অভিযানে নেতৃত্বে থাকা মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, যতো বিক্রি হবে তার ওপর ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে, এতে ফিক্সড ভ্যাট কেন হবে?
 
তিনি বলেন, ভ্যাট ফাঁকি দিতে মূসক চালান দেয় না। ইসিআর বাধ্যতামূলক হলেও ব্যবহার করে না। ফিক্সড ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ভ্যাট আদায় চলবে।

সম্প্রতি অভিযান চালানো হয় একটি সুপারশপেও। ফিক্সড ভ্যাটের পাশাপাশি ‘ভ্যাটে ডিসকাউন্ট (ছাড়)’ নামে ভ্যাট ফাঁকির অভিনব কৌশল বের হয়ে আসে এ অভিযানে।

অভিযানে থাকা মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, সুপারশপটি ২০১৩ সালে চালু হলেও ২০১৪ সালে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেয়। মাসে ৭-৮ লাখ টাকা বিক্রি হয়।
 
তিনি জানান, পস (পয়েন্ট অব সেলস) ব্যবহার করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেয় প্রতিষ্ঠানটি। মাসে প্রায় সোয়া লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করলেও ‘ফিক্সড ভ্যাট’ দেয় ২ হাজার টাকা।
 
মাসুদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অভিনব কৌশল হিসেবে ভ্যাটে ডিসকাউন্ট শুরু করেছে। এতে কিছু কিছু পণ্যে ভ্যাটের ওপর ছাড় দিচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন।
 
মূসক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর অভিজাত বহু হোটেল, রেস্তোঁরা, সুপারশপে ইতোমধ্যে অভিযানে ফিক্সড ভ্যাটের নামে ভ্যাট ফাঁকির কৌশল পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরেও বড় বড় প্রতিষ্ঠানও একইভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। ফিক্সড ভ্যাটের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান বছরে কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। জব্দ হচ্ছে কাগজপত্র, হচ্ছে মামলা।

ফিক্সড ভ্যাটের নামে অভিনব পদ্ধতি খুঁজে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী।
 
তিনি বলেন, ভ্যাট ফিক্সড নয়, ভোক্তা যা ক্রয় করবেন তা থেকে আদায় করে ব্যবসায়ীরা কোষাগারে জমা দেবেন। ব্যবসায়ী নিজের পকেট থেকে তো এ ভ্যাট দেবেন না।
 
অভিজাত প্রতিষ্ঠান ফিক্সড ভ্যাট দিচ্ছে, যা দু:খজনক। আমরা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি বলে উল্লেখ করে অভিযান জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।