ঢাকা: জীবন বিমা কোম্পানির ২০১৪ সালের ব্যবসার হিসাব তৈরি করতে ১৭টি ছক নির্ধারণ করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এই ১৭টি নির্ধারিত ছকে দেশে ব্যবসারত সকল জীবন বিমা কোম্পানিকে চলতি বছরের ব্যবসার হিসাব আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিতে হবে।
এ হিসাব প্রতিবেদনে কোনো ধরনের গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে। ব্যবস্থার অংশ হিসেবে হিসাবে গড়মিল করা কোম্পানি ও কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, জীবন বিমা কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত ছকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের হিসাব প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে হিসাবের এ প্রতিবেদন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে হবে।
হিসাব প্রতিবেদনে আইডিআরএ নির্ধারিত ১৭টি ছকের মধ্যে রয়েছে:
প্রথম বর্ষ ব্যবসা, কমিশন প্রদান, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্য খরচ, নবায়ন প্রিমিয়াম, নবায়ন কমিশন, মোট ব্যবস্থাপনা খরচ, বিনিয়োগ, জীবন বিমা তহবিল, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ব্যাংক জমা, ব্যাংক ব্যালেন্স ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত, ক্যাশ ব্যালেন্স ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত, এজেন্ট ব্যালেন্স ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত, নবায়ন বকেয়া প্রিমিয়াম ব্যালেন্স (১ মাস গ্রেস পিরিয়ড), কালেকশন ইন হ্যান্ড, আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য ব্যাখ্যার সংযুক্তি।
সূত্রটি জানায়, নির্ধারিত ছকে প্রতিবেদন চেয়ে কোম্পানিগুলোকে পৃথক পৃথক চিঠি দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বিমা আইন ২০১০’র ৪৯ ধারার ক্ষমতাবলে এ চিঠি দেওয়া হবে।
চিঠিতে প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হলে বিমা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জরুরি সভায় ডাকা হবে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, সিএফও ও প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে হবে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সভায় প্রতিবেদনের সহায়ক নথি উপস্থাপন করতে হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, ব্যবসার হিসাব প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো প্রায়শই কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম’র হিসাবে বড় ধরনের অনিয়ম করে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো ইচ্ছামত হিসাব দেখিয়ে বেশি প্রিমিয়াম আয় ও লাইফ ফান্ড বাড়িয়ে দেখায়। এমনকি এই দুই হিসাবে অনিয়ম করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের একটি অংশ কোম্পানি থেকে অনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করে থাকে।
এজন্য আইডিআরএ থেকে কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম’র সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইডিআরএ বলছে, কালেকশন ইন হ্যান্ড বলতে বোঝাবে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের যে অংশ সংশ্লিষ্ট বছরের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে বিভিন্ন ব্রাঞ্চের হিসাবে জমা আছে কিন্তু কোম্পানির মূল ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। আর আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম বলতে বোঝাবে নবায়নকৃত প্রিমিয়াম আয়ের যে অংশ ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আদায়যোগ্য কিন্তু সেগুলো গ্রেস পিরিয়ড বা পরবর্তী বছরের ৩১ জানুয়ারি মধ্যে আদায় হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে কোম্পানির কাছে কি পরিমাণ কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম আছে তার উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি এই দুই খাতে কমিশন সংক্রান্ত প্রভিশন ও অন্যান্য খরচের পরিমাণও উল্লেখ করতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জীবন বিমা কোম্পানির ২০১৪ সালের ব্যবসায়িক হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। চিঠিতে ব্যবসায়িক হিসাবের প্রতিবেদন পাঠানোর কাঠামো নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এই কাঠামো অনুসারে নির্ধারিত ছকে কোম্পানিগুলোকে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। প্রতিবেদন পাঠাতে ব্যর্থ হলে অথবা অনিয়ম করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইডিআরএ’র নির্ধারণ করা ছকের তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, আইডিআরএ ব্যবসার হিসাব এমন ছকে চাইলে অনেক কোম্পানিই বিপাকে পড়ে যাবে। বিশেষ করে কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের প্রতিবেদন তৈরিতে সমস্যা হবে। কারণ অধিকাংশ কোম্পানিই কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম ইচ্ছা মতো দেখিয়ে প্রিমিয়াম আয় বাড়িয়ে দেখায়। এতে বেড়ে যায় কোম্পানির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ।
কিন্তু আইডিআরএ এ দুটি তথ্য চাওয়ার কারণে এবং এর সঙ্গে জড়িত কমিশন সংক্রান্ত প্রভিশন ও অন্যান্য খরচের তথ্য চাওয়ার কারণে এ অনিয়ম বন্ধ হবে। এতে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় বিশেষ করে নবায়নকৃত প্রিমিয়াম আয় কমে যাবে। ফলে কমবে লাইফ ফান্ডের আকার। এর প্রভাবে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণার পরিমানও কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪