ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ চৈত্র ১৪৩১, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১১ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষণে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪
প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষণে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ফাস্ট  ট্র্যাক প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেট্রোরেল প্রকল্পগুলো নিয়ে বুধবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।



অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ(ইআরডি) সূত্র জানায়, বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছয়টি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম প্রথম ও দ্বিতীয় সভার অগ্রগতি পর্যালোচনা, প্রকল্পসমূহের সর্বশেষ বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা, মাতারবাড়ি প্রকল্পকে ফার্স্ট ট্রাকে অন্তর্ভূক্ত করা, প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন বিলম্ব বা ত্রুটি দূরীকরণের কর্মপন্থা নির্ধারণের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়া ফাস্ট  ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধের জন্য নানা কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।

ফাস্ট ট্রাক প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ফাস্ট ট্রাক ভূক্ত প্রকল্পসমূহ বৃহৎ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ‍ও দুর্নীতিমুক্ত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ বিধি বিধানের যথাযথ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।

undefined



প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস(পিপিআর)  বিধি অনুসরণ এবং জি টু জি চুক্তির বিধানগুলো মেনে চলতে হবে। প্রকল্পগুলো একদিকে যেমন বৃহৎ, অপরদিকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে জরুরি। এই প্রকল্পগুলো সব সময় প্রধানমন্ত্রী নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন যাতে করে স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।

বৈঠকে আলোচনা করা হয়, প্রকল্পগুলোর বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের মনিটারিং কমিটির সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ’

পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প: বৈঠকে বলা হয়েছে জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে আপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, সার্ভিস এরিয়া-২, নদী শাসন কাজ, জাজিরা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্লট হস্তান্তরের তদারকি চলমান রয়েছে। তাছাড়া মূল সেতুর কাজ দুটি পয়েন্টে শুরু হয়েছে। সার্ভে ও সেটিং আউটের কাজ চলমান আছে।

undefined



জাজিরা প্রান্তে আপ্রোচ রোডের কাজ ৩০ ভাগ, মাওয়া প্রান্তে আপ্রোচ রোডের কাজ ২২ ভাগ, সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ ১৫, মূল সেতু নির্মাণ কাজ ১ ভাগ, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ৯৯ ভাগ, পুনর্বাসন কাজ ৬৫ ভাগ অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া নদী শাসন এবং মূল সেতু নির্মাণ তদারকি কাজ চলমান আছে।

রুপপুর পারমাণবিক  বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পঃ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম চুক্তির আওতায় নির্ধারিত কাযর্ক্রমের ৫টির মধ্যে ৩টি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় চুক্তির ৫০ ভাগের বেশি কার‌্যক্রম শেষ হয়েছে। তৃতীয় চুক্তির কাজ শুরু হয়েছে।

তাছাড়া রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস থেকে রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে নেম ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি গঠনের মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন ও আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশন খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনের খসড়ার ওপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেছে।

রামপাল: প্রকল্প স্থানে মাটি ভরাট কাজ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফেন্সিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজার ও এইচ আর কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।

undefined


 
বিদ্যুত লাইনের জন্য টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পশুর নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ডিপিপি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
 
মেট্রোরেল: ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রকল্প(এমআরটি) লাইন-৬ এর ডিপো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির বরাদ্দ ও দখল পাওয়া গেছে।

৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে জিওটেকনিক্যাল সার্ভের কাজের উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া রাজউক থেকে জমির মূল্য ও এতে নির্মিত অবকাঠামো এবং ভূমি উন্নয়ন বাবদ ব্যয়িত  অর্থ পরিশোধের জন্য পত্র পাওয়া গেছে। ডিসেম্বরে বেসিক ডিজাইন কাজ শেষ হবে। এবং জুলাই ২০১৫ নাগাদ পুরো নকশার কাজ শেষ হবে।
 
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি(বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর অধীনে আস্ট্রা অয়েল অ্যান্ড এক্সিলিরেট কনস্ট্রাকশন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ২৬ জুন  পেট্রোবাংলা একটি অনুস্বাক্ষরিত হয়।

অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় ‘মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক পুরো তথ্যসহ আবারও উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

undefined



গভীর সমুদ্র বন্দরঃ বৈঠকে আরো বলা হয়, কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানের প্যাসিফিক কনসালটেন্টস ইন্টারন্যাশনাল(পিসিআই) সঙ্গে একটি টেকনো ইনোমিক স্ট্যাডি করা হয়েছে। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে পিপিপি ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত থাকলেও আগ্রহী বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় গর্ভনমেন্ট টু গর্ভনমেন্ট ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যে আগ্রহী দেশ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মূখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
 
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র: প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং অধিগ্রহণকৃত জমির চারিদিকে সীমানা ফেন্সিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে(একনেক) ৩৫ হাজার ৯শ ৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি ২×৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টসহ মোট ৩৭ হাজার ৩শ ৩৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ৫টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি-ব্যবসা এর সর্বশেষ