ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে শাহ সিমেন্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে শাহ সিমেন্ট

ঢাকা: ভ্যাট কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত মূল্যে সিমেন্ট সরবরাহ না করে নিজেদের মনগড়া দামে বিক্রি করে প্রায় ৭৯ কোটি টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ভ্যাট কর্তৃপক্ষ বার বার সতর্ক করার পরও শাহ সিমেন্ট বছরের পর বছর এভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে।

এমনকি প্রতিষ্ঠানটি সরকারের প্রাপ্য রাজস্বও পরিশোধ করছে না। নানা অনিয়মের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় এ পর্যন্ত শাহ সিমেন্টের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা করেছে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) কর্তৃপক্ষের চলমান অনুসন্ধানে শাহ সিমেন্টের ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আরও অনিয়ম বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষ।   

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এলটিইউ সূত্রে জানা গেছে, শাহ সিমেন্ট উৎপাদিত স্পেশাল সিমেন্ট প্রতি ৫০ কেজির বস্তার মূল্য সংযোজন কর আরোপযোগ্য মূল্য ২৮০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি করছে ২১৮ টাকায়। ৫০ কেজির পপুলার সিমেন্টের ভ্যাট আরোপযোগ্য মূল্য ২৭৭ টাকার পরিবর্তে বিক্রি করছে ২০৮ টাকায়। শাহ সিমেন্ট বাল্ক প্রতি টনের মূল্য ৫ হাজার ৩৪০ টাকা। অথচ বিক্রি করা হচ্ছে ৪ হাজার ১২৫ টাকায়। এভাবে প্রতি মাসেই লাখ লাখ বস্তা সিমেন্ট বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। রাজস্ব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসাধু প্রতিষ্ঠানটি উল্টো উচ্চ আদালতে ১৬টি রিট মামলা করেছে।   

একই সঙ্গে বিধিবহির্ভূতভাবে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে উপকরণ মূল্য বেশি দেখিয়ে বিপুল টাকা অবৈধ ভ্যাট রেয়াত নিয়ে আত্মসাৎ করেছে শাহ সিমেন্ট। এসব টাকা আদায়ে ভ্যাট এলটিইউ কর্তৃপক্ষ পড়েছে আইনি জটিলতায়।

এছাড়া বিলম্বে এন্ট্রি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে নতুন মূল্যভিত্তি ঘোষণাপত্র দাখিল না করে আইনবহির্ভূতভাবে রেয়াত গ্রহণ, দাখিলপত্র পরীক্ষায় রেয়াত গ্রহণ, বিনাকারণেই বিলম্বে এন্ট্রি করে আইন ভেঙ্গে রেয়াত গ্রহণসহ নানা ধরনের অনিয়ম করছে প্রতিষ্ঠানটি।

মূল্য সংযোজন কর নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের নিরীক্ষাসহ এলটিইউর নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির একাধিক অবৈধ রেয়াত নেওয়ার অনিয়ম পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে শাহ সিমেন্টের অতিরিক্ত রেয়াতের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে একাধিক চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়। তবে অসাধু এই প্রতিষ্ঠানটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের শুনানিতে অংশ না নিয়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা করেছে।

মূল্য সংযোজন কর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত মূল্য ছাড়া পণ্য বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ বেআইনি থাকা সত্ত্বেও শাহ সিমেন্ট তা মানছে না। নিজেদের ঘোষিত মূল্যেই সিমেন্ট বাজারজাত করে অব্যাহতভাবে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় অসংখ্যবার অনিয়ম মামলা দায়েরসহ সরকারের প্রাপ্য পরিশোধে দাবিনামা জারি করা হলেও তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। উল্টো আদালতে পাল্টা মামলা করে নিজেদের অসাধু কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার পায়তারা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে ভ্যাট এলটিইউ’র এক কমিশনার জানান, শাহ সিমেন্ট ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনাই মানছে না। প্রত্যেক বছরই রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কাছে দাবিনামা জারি করে পাঠানো হলেও পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। তাই মূল্য সংযোজন কর আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময় : ১১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।