ঢাকা, সোমবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশবন্ধু সুগার মিল রোজার আগেই চালুর আশা

সিনিয়র করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
দেশবন্ধু সুগার মিল রোজার আগেই চালুর আশা

ঢাকা: কাঁচামালের অভাবে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার রিফাইনারি মিল। ব্যাংকের সহযোগিতা ও সরকারের সহায়তা পেলে রমজানের আগে সুগার মিল চালু করতে চায় দেশবন্ধু গ্রুপ।

কর্তৃপক্ষের দাবি, এভাবে উৎপাদন বন্ধের কারণে বাজারে চিনির ঘাটতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে। একই সঙ্গে বেকার হচ্ছে হাজারো শ্রমিক।

জানা গেছে, দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার মিল প্রতি বছর তিন লাখ টনের মতো চিনি প্রক্রিয়াজাত করে। প্রতিষ্ঠানটি চাহিদার ১৫ শতাংশ চিনি সরবরাহ করে থাকে। আসন্ন রোজায় চিনি সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকের এলসি (ঋণপত্র) জটিলতা নিরসন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

দেশবন্ধু সুগার মিল পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও বোতলজাত পানি, বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় এবং কোমল পানীয়ের বোতল উৎপাদন চালু আছে। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, কারখানার যেসব ইউনিট চালু আছে তার উৎপাদন ক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। আগে যেখানে ১০ টন পণ্য উৎপাদন হতো এখন কাঁচামালের অভাবে সেখানে ৩ থেকে ৪ টন উৎপাদন হচ্ছে। সুগার রিফাইনারি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অন্য কোম্পানি থেকে চিনি এনে কোমল পানীয় উৎপাদন করছে। প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি করতে না পেরে সেটাও স্থানীয় একটি কোম্পানি থেকে কিনে কারখানা চালু রেখেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশবন্ধু সুগার মিল ২০১৭ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ২০১৯ সাল থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ২০২৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২০১৭ সাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত দেশবন্ধু গ্রুপের সাতটি কোম্পানির অনুকূলে মোট তিন হাজার ৯৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এর বিপরীতে পরিশোধ করেছে তিন হাজার ৬০৫ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপের পাঁচটি কোম্পানির অনুকূলে মোট এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ঋণ নেয়; দেশবন্ধু গ্রুপ পরিশোধ করে এক হাজার ১৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একইভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫৩ কোটি ৭০ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে; এর মধ্যে শোধ করেছে ৩৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

দেশবন্ধু গ্রুপের দাবি, তিনটি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগ পরিশোধ করা হলেও কিছু অর্থ বকেয়া আছে, যে কারণে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে পণ্যের কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে পারছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে খেলাপি হওয়া ঋণগুলো পুনঃতফসিল করতে চাইলেও ব্যাংক সে সুযোগ দিচ্ছে না। এ ছাড়া তাদের সাপ্লাইয়ার ক্রেডিট কন্ট্রাক্টের আওতায়ও কাঁচামাল আমদানি করতে সহায়তা পাচ্ছে না।

তৎকালীন সরকার উচ্চমূল্যে সুগার আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করে। তখন কোম্পানির ৩৭৮ কোটি টাকা লোকসান হয়। এই লোকসানের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দেয়নি। যার কারণে গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে জানান দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ সিএফও বশির আহমেদ।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন,  ব্যাংকগুলো দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে ঋণের কিছু টাকা পাবে, এটি সত্য। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধও করা হচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের এই মহাসংকটের কালে ঋণ পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই এ সমস্যায় পড়েছে। ব্যাংকগুলো অন্য অনেকের সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য ঋণ রি-শিডিউল সুবিধা দিলেও আমাদের সে সুযোগ দিচ্ছে না। যদিও আমরা সব ধরনের নিয়ম কানুন মেনেই রি-সিডিউলের আবেদন করেছি। কেন দিচ্ছে না সে বিষয়েও ব্যাংকগুলো কোনো ব্যাখ্যা আমাদের জানায় না।

সিএফও বশির আহমেদ বলেন, সামনে রমজান মাস, সে সময় আমরা যদি চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাই তাহলে এখনই আমাদের সুগার আমদানির বিকল্প নেই। এর জন্য আমাদের ব্যাংকের সহযোগিতা জরুরি। তাই এ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এখন ব্যাংক কোন গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসা করবে, এটা তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে নিয়মনীতি মানার পরও যদি কারও এলসি খোলার সমস্যা হয়, এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।