ঢাকা: ব্যাংকপাড়া বলে খ্যাত রাজধানীর মতিঝিল। এখানে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় যেমন আছে, তেমনি আছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও।
দেশের ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের যে আমানত রয়েছে, তার এক পঞ্চমাংশই এই মতিঝিল ও গুলশান থানা এলাকায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠেছে।
বছরের তৃতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে কার্যরত সব ধরনের ব্যাংকে মোট আমানতের পরিমাণ ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মতিঝিল ও গুলশান এলাকায় গচ্ছিত রয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ আমানত। মতিঝিলে আছে মোট আমানতের ১০ দশমিক ৮ শতাংশ; অর্থাৎ ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর গুলশান এলাকায় আছে মোট আমানতের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ; অর্থাৎ এক লাখ ৭৭ হাজার ১৭২ কোটি এক লাখ টাকা।
তিন মাস আগে অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুন) শেষে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বা দুই লাখ ৯৭২ কোটি ৬০ টাকা ছিল মতিঝিলে। আর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ছিল গুলশান এলাকায়।
আমানত কমেছে
দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিক শেষে দেখা গেছে, ব্যাংক আমানত ১৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা কমে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকে আমানত কমে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, আগস্টে একটি অবিস্মরণীয় গঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার ফলে সরকারের লোক ও তাদের সমর্থক নেতা-কর্মীরা টাকা তুলে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীসহ ক্ষুদ্র আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না, তারা তুলে নিয়েছেন।
অবশ্য ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে কিছু রাজনীতিক ও শীর্ষ ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ হয়। ফলে তাদের হিসাবে নতুন করে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না, আবার উত্তোলনও করা যাচ্ছে না। এদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। যে কারণে টাকার প্রবাহ কমেছে। এসব ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তার অনেক কোম্পানি বন্ধ, আবার কোনো কোনো কারখানার উৎপাদনও কমে গেছে। সারা দেশেই কম বেশি এমন ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে আমানতে টান পড়েছে।
ঢাকার মতিঝিল-গুলশান ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হওয়ার কারণে আমানতের নিম্নমুখিতার চিত্রও এখানে বেশি স্পষ্ট।
ব্যাংক আমানতে দৈন্যের ছাপ দেশের বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামেও পড়েছে। বন্দর নগরের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ডবলমুরিং ও কোতোয়ালী থানায় এলাকার আমানতও কমে গেছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে দেখা গেছে, ডবলমুরিং থানা ও কোতোয়ালী এলাকায় আমানত যথাক্রমে ৭৫ হাজার ৫১০ কোটি ৯১ লাখ ও ৫৫ হাজার ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে এই দুই এলাকায় আমানত ছিল যথাক্রমে ৭৫ হাজার ৯৫০ কোটি ১৮ লাখ ও ৫৪ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৫৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/