ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শিল্প খাতের উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে এফবিসিসিআই-শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈঠক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
শিল্প খাতের উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে এফবিসিসিআই-শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈঠক

ঢাকা: দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও শিল্প মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।

বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় উপযুক্ত শিল্পনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, এসএমই, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ, পণ্যের মান এবং মেধা সম্পত্তির অধিকার রক্ষা, শিল্প খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সেইসঙ্গে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি খাতকে আরও সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, খাতভিত্তিক শিল্প পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব শিল্প প্লট ও পার্কে বেসরকারি খাতের অংশ নেওয়া নিশ্চিত করতেও শিল্প মন্ত্রণালয় সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণে সহায়ক শিল্প স্থাপনে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রণীত জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ এর সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুল আলম।  

শিল্পনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি।  

রপ্তানি নীতি ও শিল্পনীতিকে লিগ্যাল বাইন্ডিংসের মধ্যে আনা, ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এর পরিবর্তে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা, জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে ৩০টি জায়গা থেকে অনুমোদন না নিয়ে পাঁচটি স্থায়ী অনুমোদনের ব্যবস্থা করা, নতুন উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের জমি কেনার ক্ষেত্রে জমির দামের ২০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যাংক ও অন্যান্য ফাইন্যান্সিং অথরিটি সফট লোন বা ইন্টারেস্ট ফ্রি এবং ২০ বছরে পরিশোধযোগ্য ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা, স্টার্টআপের জন্য ইনোভেশন ফান্ড, ক্রিয়াটিভ ফান্ড ইত্যাদির জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা রাখা, সেমিস্কিল ও আনস্কিল লেবারকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে স্কিলড লেবারে পরিণত করা, শিল্পনীতিতে সেবা খাতের শিল্প, উৎপাদন খাতের শিল্প, কৃষিখাতের শিল্প যাতে প্রাধান্য পায় সেভাবে সঙ্গায়িত করা এবং ফিসক্যাল ও ফাইন্যান্সিয়াল বেনিফিট দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা ক্ষুদ্র তাদের বেশি সুবিধা, যারা মাঝারি তাদের কিছুটা কম সুবিধা, যারা বড় তাদের স্বাভাবিক সুবিধা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি ক্লাসিফিকেশন করার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২২, হালকা প্রকৌশল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২২, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার নীতিমালা ২০২২, প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৩, জাতীয় লবণনীতি ২০২২, অটো মোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১, জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১,  বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, এনপিও, চামড়া শিল্প, রুগ্নশিল্প, এবং বিএসটিআইয়ে সমস্যা, সম্ভাবনা ও নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা এসব প্রস্তাবনা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্প খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ সময় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা গড়তে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করে যাবে শিল্প মন্ত্রণালয়। দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে করণীয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একটি নতুন যাত্রার শুরু হলো। বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সামনের পথে এগিয়ে যাওয়া শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সরকারের উদ্দেশ্য নয় বরং সরকার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুষ্ঠু ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিতে বিভিন্ন পলিসি নির্ধারণ ও নির্দেশনার কাজ করছে। সার ও চিনি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান, মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট  যশোদা জীবন দেবনাথ, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকসহ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) শেখ ফয়েজুল আমীনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
এমকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।