ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তিন মাসে বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্বিগুণ, যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
তিন মাসে বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্বিগুণ, যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ও ড. আহসান এইচ মনসুর

ঢাকা: তিন মাসে দ্বিগুণ হয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাব। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা, সরকারের বিভিন্ন রকম প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।

এর ফলে নিবন্ধন বাড়ছে। এসব প্রস্তাবনা বিনিয়োগে রূপান্তরে পরিবেশ উন্নয়নে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতি গবেষকরা বলছেন, যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সেগুলো বিনিয়োগ শুরু করতে বন্ধুসুলভ মানসিকতা ও আস্থার পরিবেশ তৈরির কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। বিনিযোগ করতে বিদেশিরা যেভাবে এগিয় আসছে তা ধরে রাখতে অবাকাঠামোসহ বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেগুলো দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে সরাসরি ও যৌথ বিনিয়োগে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকার নিবন্ধন করেছে। যা আগের বছরেই একই সময়ের দ্বিগুণেরও বেশি। আগের বছর ওই সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।

যে সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাবের এ ধরনের ইতিবাচকের খবর দিয়েছে, সে সময়ের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে হোঁচটের খবর এসেছে। দেশে চলছে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। খাদের কিনারে চলে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন-রিজার্ভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিভিন্ন ছাঁট-কাট করতে হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়ছে নতুন কর্মসংস্থানের।

এ অবস্থায় বৈদেশিক বিনিয়োগ নিবন্ধন বাড়ায় স্বস্তির খবর হতে পারে; যদি এ প্রস্তাবকে বিনিয়োগ শুরুর খবরে পরিণত করা যায়। তাহলে দেশে মার্কিন ডলারের যে সংকট চলছে তা সমাধানে সহায়ক হবে। সহায়ক হবে নতুন কর্মস্থানে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থাহীন, অবন্ধুসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যুরোক্র্যাসির মানসিকতা দূর করতে হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের খবর পাচ্ছি তা কাগজে কলমে। বাস্তবতা হলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেগুলো প্রকৃত পক্ষে বিনিয়োগ হয় না, পুরোপুরি আলোর মুখ দেখে না। ঘোরাঘুরি করে প্রস্তাবনার বড় অংশ বিদেশিরা চলে যায়। এটি  বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা।

এ কারণে বিনিয়োগ প্রস্তাব হওয়ার খবরে আমরা যে খুবই আশাবাদী,  সে কথা বলবো না; বলেন এ পরিচালক।

তিনি বলেন, এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আমরা উদ্যোগের কথা বলি এবং তা বলেই যাচ্ছি। কাজ হয় না। কারণ আমাদের এ প্রশাসনিক কাঠামো ও মানসিকতা দিয়ে এগুলো ম্যানেজ করতে পারছি না। আমাদের মানসিকতা বিদেশিরা আমাদের তোষামোদ করবে, বিনিয়োগের সুযোগ দিলে দেশে থেকে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যাবে; এত সুযোগ দেবো, আমি কিছুই পাবো না! এ মানসিকতা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে না। এ ব্যুরোক্রেসির মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে-যোগ করেন এ গবেষক।

বিনিয়োগ প্রস্তাব আসে কিন্তু তার অধিকাংশ বাস্তবে রূপ পায় না, এর প্রতিকার কি-এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশে যেটি হয় পুরো সেবা দেয়, সাদর আপ্যায়ন করে। বিনিয়োগ শুরু করতে জুতার তলা ক্ষয় করতে হয় না। এখানে আমাদের এটি বড় ব্যর্থতা আছে।

তিনি বলেন, দেশে ওই অর্থে কোথাও সেবা পাওয়া যায় না, সেবা না পাওয়া গেলে বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে না। আমরা যেভাবে দেশের নাগরিকদের ট্রিট করি, একইভাবে বিদেশিদেরও ট্রিট করি। দেশের নাগরিকদের সেবা দেই না, বিদেশিদের সঙ্গেও একই রকম ব্যবহার করি। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দুটোরই পরিবর্তন দরকার।

কীভাবে বিদেশিদের আকর্ষণ করে আটকাতে পারি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। অন্যান্য বাইরের দেশের কাছে থেকে শিখতে হবে, তারা কীভাবে করে, তিনি যোগ করেন।

বিনিযোগ প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপ দিতে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিসনেসের কথা বলছি; বিনিয়োগে বিভিন্ন ধরনের ফর্মালিটি সমস্যা করছে- এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী এলে তাকে বিভিন্নভাবে সার্ভিস দিতে হয়- এগুলো সহজলভ্য করতে হবে। আমাদের ইউলিটি সার্ভিসগুলোর মান উন্নয়ন করতে হবে। এটি দেশের জন্য ভালো হবে।

বিনিয়োগের জন্য সরকারের প্রচারণা, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ও অবকাঠামো উন্নয়নের সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন (রিজার্ভ) কমে গেছে। এ জন্য শুধু প্রস্তাব আসলেই হবে না, এগুলো দৃশ্যমান করা এ সময়ের দাবি।

বিআইবিএমের সাবেক এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাব হলো বিনিয়োগ নিবন্ধনে তালিকাভুক্ত করা। আর নিবন্ধন করা মানেই বিনিয়োগ নয়। তার মানে হলো আমরা বিনিয়োগের জন্য মার্কেটিং করছি; এর ফলে বিনিযোগকারীরা আসছে। কিন্তু এসব প্রস্তাব কাজে লাগাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এগুলো কীভাবে বিনিয়োগ হয়, সবার আগে এ উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ৫ মে, ২০২৩
জেডএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।