ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আগরতলা শহর থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সরানোয় সমালোচনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
আগরতলা শহর থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সরানোয় সমালোচনা

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকার গোল চত্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার।

আগরতলার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত পোস্ট অফিস চৌমুহনীর গোল চত্বরে রাখা ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কামান ও ট্যাংক।

রোববার (১৫ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হঠাৎ দুটি ক্রেনে করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা দেখতে পান দুটি ক্রেনের সাহায্যে সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কামান ও পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা ট্যাংক। এই দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। ত্রিপুরাবাসীর আবেগ জড়িত এসব সামগ্রী কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চান স্থানীয়রা।

পরবর্তী সময়ে পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা. শৈলেশ কুমার যাদব একটি নোটিশ জারি করে জানান, আগরতলা শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অস্ত্রগুলি পোস্ট অফিস থেকে সরানো হয়েছে। এগুলো আগরতলার লিচু বাগান এলাকার মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম শহীদ জওয়ান অ্যালবার্ট এক্কার নামে নির্মিত পার্কে রাখা হয়েছে।

ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে কংগ্রেস এবং সিপিআইএম। প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র তাপস দে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ অবদান রয়েছে। আগামী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাংলাদেশের জন্মের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর অবদান জানতে না পারে সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে তৈরি অ্যালবার্ট এক্কা পার্ককে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা থেকে এ কাজ করা হয় তবে ট্যাংক ও কামানের রেপ্লিকা তৈরি করে রাখা যেত। কিন্তু সরকার তা না করে রাজধানীর জনবহুল এলাকা থেকে এগুলো সরিয়ে দিয়েছে পূর্ব পরিকল্পনা করে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সিপিআইএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, জনবহুল স্থানে রাখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্থানীয় মানুষসহ বাইরে থেকে আসা মানুষ দেখে আসছে। এগুলো এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার মানে হচ্ছে ত্রিপুরার ঐতিহ্যকে নষ্ট করার অপচেষ্টা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকায় অবস্থিত কংগ্রেস ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে ব্যবহার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্ট অফিসের সামনের গোল চত্বরে একটি শহীদ বেদী তৈরি করা হয়, পাশাপাশি কামান ও ট্যাঙ্কটিকে রাখা হয়। প্রতি বছর বিজয় দিবসের দিন এখানে ভারতীয় সেনারা শহীদ সেনাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
এসসিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।