চট্টগ্রাম: আমাদের অবজারভেশন হচ্ছে, দেশে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সব পরিবারের শিশুরা খুব উপেক্ষিত, বঞ্চিত। ধরেন বড় লোকের সন্তানও মাঠে গিয়ে খেলতে পারছে না।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ফুলকির সুবর্ণজয়ন্তী বছরের প্রথম আয়োজন তিন দিনব্যাপী শিশুকিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কবি আবুল মোমেন এসব কথা বলেন। বর্ণিল আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রামের একমাত্র এভারেস্টজয়ী ডা. বাবর আলী।
আবুল মোমেন বলেন, কোনো বাড়িতে গেলে দেখা যায় সেই বাড়ির স্কুলগামী শিশু মেহমানের মতো। তার কোনো কাজ নেই। সে শুধু পড়ে। পরীক্ষার পড়া মুখস্থ করে। প্রশ্নগুলো আরেকজনের, তার মনে কোনো প্রশ্ন জাগে না। উত্তরগুলোও আরেকজনের, শিক্ষকেরা তৈরি করে দেয়। ফলে অন্যের প্রশ্নের অন্যের করা উত্তর মুখস্থ করে তারা লেখে। আমি তাদের নাম দিয়েছি পেসিভ স্টুডেন্ট। অ্যাকটিভ স্টুডেন্ট না হলে তার মাথায় কিছু ঢুকবে না। আমাদের পুরো চেষ্টা শিশুদের অ্যাকটিভিটির মধ্যে। পড়াশোনাও অ্যাকটিভিটির মধ্য দিয়ে যাবে। বড়মাপের আয়োজন প্রভাব ফেলে। তাই আমরা চেষ্টা করি এক বছর পর পর শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব করতে।
ফুলকির সর্বাধ্যক্ষ শীলা মোমেন জানান, ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেছিল ফুলকি। এবার ৫০ বছরে পা দিয়েছে ফুলকি। বছরব্যাপী নানা পরিকল্পনা আমাদের আছে। আমরা চাই শিশু-কিশোররা যেন কিছু পায়।
তিনি বলেন, উন্নত হওয়া মানে নিজস্ব ঐতিহ্য সব বিলীন করা নয়। আমরা ঐতিহ্য ছাঁটাই করে দিচ্ছি। ফলে দিনে দিনে উন্মূল হয়ে যাচ্ছি। ফুলকির উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভবিষ্যৎ শিশুদের গড়া। আমরা শিশুশিক্ষার রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করেছি। অনেক স্কুল এটা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন। আমরা চাই শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্য, জ্ঞান অর্জন, আত্মিক বা ধর্মীয় বোধ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসহ সামগ্রিক বিকাশ যেন হয়। আমরা শিশুদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিই না। তারা নিজেরা লেখে, শিক্ষক সংশোধন, পরিমার্জন করে দেন। শরীর গঠনে যেমন খেলাধুলার ওপর জোর দিই। তেমনি মানসিক পুষ্টি পূরণে দরকার সাংস্কৃতিক উপাদানে। আমরা কারাতে শেখাই। ইংরেজি কথোপকথন শেখাই। সায়েন্স ল্যাব আছে। সহজ পাঠ ছাড়াও বাইরের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে।
শিশুদের নানা দিকে প্রবণতা থাকে। আমরা গল্প বলাটাকে জোর দিই। কারণ ভয় পাওয়ার অনুভূতি নিতে চায় শিশুরা। মিছেমিছি ভয় উপভোগ করে। এখনকার বাবা মা গল্প বলতে পারে না। বিদেশে স্টোরি টেলিং সোসাইটি আছে। আমাদের গল্পবলার আয়োজন আছে।
ফুলকির সব প্রকল্পের পরিবেশনা ছাড়াও এবারের উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবে স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন, স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন, উপলব্ধি শিশুবিকাশ কেন্দ্র, ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ন্যাশনাল প্রাইমারি বিদ্যালয়, এয়াকুব আলী দোভাষ উচ্চ বিদ্যালয়। থাকছে ব্রতচারী, কারাতে, বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, পাপেট শো, বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের নমুনা ও প্রজেক্ট প্রদর্শনীসহ বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। শেষদিন শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তব্য দেবেন বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। মূল মিলনায়তনে থাকবে গল্প শোনার আসর।
শেষ দুদিন সকালে থাকছে শিশুকিশোরদের জন্য মাটির কাজ, পাপেট তৈরি, ছাপচিত্র ও তাঁত বুননের কর্মশালা। যেখানে ৯-১৬ বছরের যেকোনো শিশুকিশোরের জন্য নিবন্ধন করে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। শেষদিন সন্ধ্যায় ছোটদের জন্য গান পরিবেশন করবে সঙ্গীত সংগঠন 'রক্তকরবী'। উৎসবের সমাপ্তি হবে ঢোলকবাদক শিবু দাস ও তার দলের ঢোল বাদনের মধ্য দিয়ে।
চতুর্থবারের মতো আয়োজিত শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবের এ আসরে মূল সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রুপ। এছাড়াও সহযোগিতায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও আবুল খায়ের গ্রুপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি