ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৪
সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মূল ইনিংসেই অভিজ্ঞতা আর শক্তির বিশাল পার্থক্য ঘুচিয়ে পাকিস্তানকে ভয় পাইয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে বিশ্বকাপের নতুন দলটি ম্যাচ নিয়ে গেল সুপার ওভারে।

যেখানে শেষ হাসি হাসলো তারাই। বাবর-রিজওয়ানদের লজ্জায় ফেলে তারা নিজেদের অভিষেক আসরেই পেল টানা দুই জয়ের দেখা।

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে আজ নির্দিষ্ট ওভারের খেলায় দুই দলই থামে ১৫৯ রানে। এরপর সুপার ওভারে অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ আমিরের হাতে বল তুলে দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তবে সিদ্ধান্তটি বুমেরাং হয় পাকিস্তানের জন্য। ব্যাট হাতে আমিরকে পরীক্ষায় ফেলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারন জোনস। প্রথম বলে বাউন্ডারি হজম করা আমির ওই ওভারে দেন ১৮ রান। এর মধ্যে ৭ রান আসে অতিরিক্ত।  

এত বেশি রান খরচ করে এমনিতেই ব্যাকফুটে চলে যায় পাকিস্তান। এরপর জবাব দিতে নেমে তারা ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইফতিখার আহমেদ ও ফখর জামানকে। আমেরিকান পেসার নেত্রভালকরের প্রথম বলে কোনো রান নিতে পারেননি ইফতিখার। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি, তৃতীয় বলে আউট! পরের দুই বলে এলো ৭ রান। ফলে শেষ বলে লক্ষ্য দাঁড়ালো ৭ রান! কিন্তু পাকিস্তান নিতে পারল মাত্র ১ রান। ফলে ৫ রানে জিতে গেল যুক্তরাষ্ট্র।

সবমিলিয়ে সুপার ওভারে পাকিস্তান নিতে পারে ১৩ রান। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেললো যুক্তরাষ্ট্র। অভিষেক আসরেই সাবেক চ্যাম্পিয়নদের হারালো তারা।  বাংলাদেশের পর টি-টোয়েন্টিতে তাদের কাছে হেরে যাওয়া মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলুড়ে দল হচ্ছে পাকিস্তান। আর পাকিস্তান এই প্রথম কোনো সহযোগী সদস্য দেশের কাছে হারলো।  যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই জয়কে আপসেট বলা যায় কি না, এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে জয়টি তাদের জন্য ঐতিহাসিক।

ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আজ ভিন্নরূপে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানকে শুরু থেকেই চাপে রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের বোলাররা। বলার মতো রান করতে পারেন কেবল পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ও মিডল অর্ডার ব্যাটার শাদাব খান এবং শেষদিকে শাহিন শাহ আফ্রিদি।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ফেরেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। পরের ওভারে তিনে নামা উসমান খান (৩) ও পঞ্চম ওভারে ফখর জামানের (১১) উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শাদাব ও বাবর মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন। একপ্রান্তে বাবর থাকেন মাটি কামড়ে। অন্যপ্রান্তে কিছুটা হাত খুলে খেলেন শাদাব। তারা দুজন মিলে যোগ করেন ৭২ রান।  

তুলনামূলক আগ্রাসী ব্যাটিং করে দলের রানের চাকা সচল রাখছিলেন শাদাব। বাবর খেলছিলেন ওয়ানডে ধাচে। দলীয় একশ'র আগেই ফেরেন শাদাব, ২৫ বলে ৪০ রান করে। এরপর ক্রিজে এসে প্রথম বলেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থোডক্স বোলার নস্টুশ প্রদীপ কেনজিগের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আজম খান।

টানা উইকেট পতনের চাপে আর হাত খুলতে পারেননি বাবর। দলকে ১২৬ রানে রেখে জসদীপ সিংয়ের বলে এলডব্লিউ হয়েছেন তিনি। ৪৩ বলে তার ৪৪ বলের ইনিংসটি ৩টি চার ও ২ ছক্কায় সাজানো। এই ইনিংস খেলার পথে একটি রেকর্ড গড়েছেন বাবর। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশির রানের (৪০৬৭) মালিক এখন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ভারতের বিরাট কোহলি (৪০৩৮) ও তৃতীয় স্থানে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৪০২৬)।

শেষদিকে ইফতিখার আহমেদের ১৪ বলে ১৮ রান ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রানের সুবাদে মান বাঁচানো সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।

১৬০ রান লক্ষ্য তাড়ায় নেমে যুক্তরাষ্ট্রকে দুই ওপেনার স্টিভেন টেইলর ও মোনাঙ্ক প্যাটেল প্রথম ৫ ওভারে ৩৬ রান তুলে ভালো শুরু এনে দেন। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে টেইলর (১২)-কে বিদায় করেন পাকিস্তানের নাসিম শাহ।  এরপর হাল ধরেন মোনাঙ্ক ও অ্যান্ড্রিস গাউস। দুজনে মিলে প্রায় ৭০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তোলেন তারা। তবে ১৪তম ওভারের প্রথম বলে গাউসকে (২৬ বলে ৩৫ রান) বোল্ড করে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান হারিস রৌফ। এদিকে মোনাঙ্ক তুলে নেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের তৃতীয় ফিফটি।

পরের ওভারের প্রথম বলে ফের ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্র।  অধিনায়ক মোনাঙ্ক ফিফটির পরেই বিদায় নেন। ৩৮ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি থামে মোহাম্মদ আমিরের বলে। তবে এরপর ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচের নায়ক অ্যারন জোনস। কানাডার বিপক্ষে ঝড় তোলা এই ব্যাটার এই ম্যাচেও দলের ভরসা হয়ে ছিলেন। জোনস খেলছিলেনও দায়িত্ব নিয়েই। তবে ম্যাচ ঘুরে যায় ১৭ ও ১৮তম ওভারে। যখন নাসিম শাহ ও শাহিন শাহ মিলে দেন মাত্র ১৩ রান।  

টানা দুই ওভারে যথেষ্ট না রান তুলতে না পারায় শেষ দুই ওভারে ২১ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে।  আমির ১৯তম ওভারে দেন মাত্র ৬ রান। ফলে শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিল স্বাগতিকদের। হারিসের করা ওই ওভারের প্রথম তিন বলে আসে মাত্র ৩ রান। কিন্তু চতুর্থ বলে জোনস হাঁকান বিশাল এক ছক্কা। ফলে শেষ দুই বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬ রান। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নেওয়ার পর শেষ বলে নিতিশ কুমার হাঁকালেন চার! স্কোর লেভেল! 

ফলে সুপার ওভারে গড়ালো ম্যাচ। যেখানে জিতে ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি এবারের আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই জয় পেল যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে বড় রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।