ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

সবুজ বেষ্টিত যমুনার চরে মহিষের বাথান

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
সবুজ বেষ্টিত যমুনার চরে মহিষের বাথান

বগুড়া: যমুনার বিশাল বুকে এখন বিরাজ করছে যেন রাজ্যের শূন্যতা। সেখানে জেগে উঠেছে বড়-ছোট বিপুল সংখ্যক চর।  চরগুলোতেই বিরাজ করছে সবুজের সমারোহ। সবুজ বেষ্টিত যমুনার এসব চরগুলোতে এখন দেখা মিলবে মহিষের বাথান। 

বেশ কয়েক মাস ধরেই এক চর থেকে আরেক চরে মহিষের বাথান নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন মালিকরা। যে চরেই যাচ্ছেন সেখানেই তারা গড়ছেন অস্থায়ী বসতি।

কারণ চরের বিশাল বুকজুড়ে গজাচ্ছে ঘাস। প্রকৃতির গজে ওঠা সেই ঘাস খাওয়াতে মহিষের বাথান নিয়ে চরে অবস্থান করছেন তারা।
 
তাদেরই একজন বিমল চন্দ্র। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে মহিষের বাথান নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। এখন তিনি অবস্থান করছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ি চর এলাকায়। সেখানে গড়েছেন অস্থায়ী বসতি। নিজের থাকার জন্য বানিয়েছেন ঝুপড়ি ঘর। এছাড়াও গামলা, পাতিলসহ প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী রয়েছে তার সঙ্গে। যা নিজের ও মহিষের খাবার বাসন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
 
সেই ঘরের পাশেই দেখা গেলো একাধিক ছোট ছোট বাঁশের খুঁটি। যেগুলো শক্তভাবে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। যার সঙ্গে মহিষগুলো বেঁধে রাখা হয়। প্রতিদিন ভোরে মহিষগুলো দলবেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। চরের বিশাল এলাকায় গজে ওঠা ঘাস খায় সেই মহিষের দল। এরপর সন্ধ্যায় এনে দড়ি দিয়ে মাটিতে গেড়ে রাখা খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয় সেই মহিষগুলো। এসবের মধ্যে নিজের খাবার পর্বটাও সেরে নেন এই মহিষ পালক।  
 
মহিষের মালিক বিমল চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, ঘাসের পাশাপাশি মহিষগুলোকে খৈল, ভূষি মিশিয়ে দিনে একবেলা খাওয়ানো হয়। দলবেঁধে মহিষগুলো চর এলাকায় খাস খায়। সারাদিন ওদের পেছনেই সময় ব্যয় করতে হয়। বর্তমানে চর এলাকায় প্রচণ্ড রোদের তেজ। তবু কষ্ট করেই মহিষগুলো দেখভাল করতে হয়। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা তো আছেই। শুধু উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বাড়তি লাভের আশায় মহিষের বাথান নিয়ে চরে থাকা।  
ঘাস খাচ্ছে দলবেঁধে মহিষের দল।  ছবি: আরিফ জাহানসারিয়াকান্দি বগুড়ার যমুনা বেষ্টিত একটি উপজেলা। এই উপজেলায় কর্ণিবাড়ী, কামালপুর, কুতুবপুর, চন্দনবাইশাসহ একাধিক চরাঞ্চলে মহিষের বাথানের দেখা মিলবে এখন। সবুজ বেষ্টিত চরের এলাকাগুলোকে এখন মহিষের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বললেও ভুল হবে না। এসব চর এলাকায় প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে এখন দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহিষের বাথান।
 
মহিষ পালক বিকাশ মোহন্ত বাংলানিউজকে বলেন, যমুনা নদী যেমন বুক উজাড় করে দেয় তেমনি আবার বুক খালি করে সবকিছু কেড়েও নেয়। এটা যমুনার চিরাচরিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিবার বন্যাও হয়। বসতবাড়ি-ফসলের ক্ষেতসহ সবকিছু হারিয়ে যায় যমুনায়।
 
তার ভাষ্য, চরবাসীদের শুধু ফসল নির্ভর হয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। বেঁচে থাকার জন্য একেক জনকে একেকভাবে লড়াই করতে হয়। সেই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমি মহিষ পালন করে আসছি। চরের বুকে সবুজ ঘাসের নেই কোনো সঙ্কট। এসব কারণে চরে মহিষ পালনে ব্যয় তুলনামূলক কম। এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
 
শহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বাংলানিউজকে বলেন, বানের কয়েক মাস সমস্যা হয়। তারপরও মহিষের জন্য ঘাসের তেমন একটা অভাব হয় না। তবে অন্যান্য গো-খাদ্যের কিছুটা সঙ্কট হয়।  

এসব ব্যক্তিরা জানায়, বানের কয়েক মাস ছাড়া চরে প্রকৃতির গজে ওঠা ঘাস খাওয়ানোর জন্য মহিষের বাথান নিয়ে বিভিন্ন চর এলাকায় অবস্থান করেন তারা। কিন্তু অন্যান্য খাবারের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।  

এ কারণে আগের তুলনায় প্রতিটি মহিষের পেছনে তাদের উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে বলেও দাবি করেন তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।