পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের আওতাধীন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দুবলারচর, মাঝেরকিল্লা, মেহের আলীর চর, নারকেলবাড়িয়া ও শেলার চর- এ পাঁচটি শুটকিপল্লীর জেলেদের দম ফেলারও যেন সময় নেই। সবাই ব্যস্ত মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির কাজে।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে দুবলার জেলেপল্লীতে থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকি তৈরিতে প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জেলেরা। নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের পাশ-পারমিট সংগ্রহ করেন ডিপো মালিক ও বহদ্দাররা। জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ ধরে আনার পর চলে শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়া।গত ২৬ অক্টোবর থেকে চলছে ৫ মাসের শুঁটকি আহরণ মৌসুম। ডিপো মালিক, বহদ্দার ও জেলে মিলে পাঁচটি চরে ৫০ হাজার মৎস্যজীবী শুঁটকি তৈরি করছেন এবার। এই শুঁটকিতেই হবে হতদরিদ্র জেলেদের ভাত-কাপড়। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় তারা দুর্গম এ জায়গায় কাটান শুধুমাত্র পেটের দায়ে।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বছর প্রায় ১ হাজার অস্থায়ী কাঁচাঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে জেলেদের নিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রলার ও নৌকা যাচ্ছে সমুদ্রে। ছুরি, তেল ফাইশ্যা, মধু ফাইশ্যা, ফ্যাশা, ভোলা, রুপচাঁদা (কমপ্লেট), লইটা, খয়রা, বাসপাতা, বড় পোমা, ছোট পোমা, লাক্কা, শাপলাপাতা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে এসে শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে।খুলনার দাকোপ উপজেলা থেকে আসা জেলে হরিমন দাস বলেন, ‘এবার সাগরে অনেক মাছ পাচ্ছি। খুবই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে আমাদের। এখানে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও আয় ভালো। পাঁচ-ছয় মাসের আয় দিয়ে সারা বছর মোটামুটি চলে যায়’।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জেলে রুস্তম আলী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এবার বনদস্যু কমে যাওয়ায় আমরা স্বস্তিতে রয়েছি। চিন্তামুক্ত থেকে মাছ ধরতে পারছি’।ডিপো মালিক পিরোজপুরের শহিদুল মল্লিক জানান, শুঁটকিপল্লীর জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকারও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব পায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবারের শুঁটকি মৌসুমে ৫টি চরে ৩৮ জন ডিপো মালিকের আওতায় জেলেপল্লীগুলোর ৮৭০টি ঘরের প্রায় ৫০ হাজার জেলে শুঁটকির জন্য মাছ ধরছেন। এ বছর প্রায় তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলেদের যতো বেশি সম্ভব সুযোগ-সুবিধা দিতে আমরা সব সময় চেষ্টা করি’।বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এএসআর