ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

ঋণের জালে বন্দি মেঘনাপাড়ের জেলেরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৬
ঋণের জালে বন্দি মেঘনাপাড়ের জেলেরা ছবি-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভবানীপুর, দৌলতখান (ভোলা) থেকে: ‘রাইতে ঘুম হয় না, আতঙ্কে থাকি; এই বুঝি ঘর ভেঙে গেলো। কোথায় যাব, নদী তো সবই লইয়্যা গেলো।

তাই বাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে আছি। হের মইধ্যে আবার ঋণ পরিশোধের চিন্তা। ’

অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনা তীরের বাসিন্দা লাইজু বেগম।

তিনি জানান, এক সময় ঘর-বাড়ি থাকলেও এখন আর কিছুই নেই। নদীতে চার বার ঘর ভেঙেছে তার। স্বামী পেশায় জেলে। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। অভাবের কারণে স্থানীয় এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণ শোধ করতে গিয়েই সব শেষ, এখন ঠিকমতো খাবার জোটে ‍না।

এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অকূলপাথারে পড়েছেন গৃহবধূ নাহার। তিনি জানান, তার স্বামী সিরাজ নদীতে মাছ ধরেন।   এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘর মেরামত করেছেন। এখন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় কষ্টে আছেন। চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও কোনো খোঁজ নেয় না। তার ওপর রাতে মেঘনার ভয়াল স্রোতের দুশ্চিন্তা তো আছেই।

এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চরম সংকটে শুধু নাহার ও লাইজু নয়, জেলেপল্লীর প্রায় সব পরিবারের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরো বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদের বেশিরভাগই আবার সহায়-সম্বল হারিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে মানবেতন দিন কাটাচ্ছেন।

বাধের উপর আশ্রিত হাসনুর, তাসলিমা, রোকেয়া, ইউনুস, ইব্রাহিমসহ অনেকেরই একই অবস্থা। মেঘনা নব হারানো এসব জেলেদের এনজিওর ঋণ আরো বেশি ঋণী করে ‍তুলেছে।
 
সম্প্রতি দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর এলাকার জেলেপল্লী ঘুরে এমন তথ্য জানা গেলো।

ভবানীপুরের উপকূল রক্ষা বাঁধের উপর আবাস গেড়েছেন ভ‍ূমিহীন, অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষেরা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এমন প্রায় ৫০০ মানুষের বসতি এখানে।

মেঘনার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদে বাঁধের দুই পাশে তৈরি হয়েছে সারি সারি ঝুপড়ি ঘর। মেঘনার ছোবলে কিছুদিন পরপর এদের ঠিকানা বদল হলেও দৈন্যদশরা কোনো পরিবর্তন হয় না।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও তা পরিশোধ করতে গিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হয় তাদের। বাধ্য হয়ে অনেক সময় ঘরের আসবাবপত্র পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়।
 
গৃহবধূ সামসুন জানান, ২৪ ঘণ্টাই স্রোতের শব্দ, বাতাস বেশি হলেই ঘর কেঁপে ওঠে। তাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই। তাই এনজিও ঋণ ছাড়া কোনো উপায় নেই তাদের।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উপকূলের দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রান দিয়ে থাকি। এছাড়া ঈদ মৌসুমে তাদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়।

তিনি জানান, সম্প্রতি আঘাত হানা ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও সহযোগিতা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।