ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিতরণ শুণ্য

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিতরণ শুণ্য ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাবুরা (শ্যামনগর), সাতক্ষীরা থেকে: পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বিতরণই হয় না জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী। থমকে আছে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম।

চোখের দেখায় তাই জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে গাবুরা ইউনিয়নে।

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় গাবুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় দোতলা ভবনটি। সেখানে একজন সরকারি চিকিৎসক ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও উপস্থিত নেই তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন কনিস্ক কুমার মৃধা। তার মূল পদায়ন ইউনিয়ন মুন্সীগঞ্জেরর সঙ্গে গাবুরাকে যোগ করা হয়েছে আরো বছর দুই আগে। নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে তিনদিন গাবুরায় বসার কথা তার। তবে তিন মাসে একবার যাচ্ছেন তিনি।

একইভাবে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা সুকণ্যা রায়কে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে গাবুরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের অধীনে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও সপ্তাহে তিনদিনের বদলে তিনমাসে একবার গাবুরা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী মজুদ ও বিতরণের হিসেব অনুযায়ী, গত মে মাসে গাবুরা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ৩০০ পিস 'নিরাপদ' কনডম রয়েছে। যার মধ্যে বিতরণ হয়নি একটিও।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি 'সুখী' রয়েছে ৩০ সাইকেল অর্থাৎ সাড়ে তিন হাজার। তবে বিতরণ করা হয়নি একটিও। দীর্ঘমেয়াদি ইঞ্জেকটেবল রয়েছে ৩৩টি, বিতরণ শূন্য।

দীর্ঘ মেয়াদি আইইউডি পদ্ধতি তিন পিস থাকলেও বিতরণ হয়নি একটিও। আর নারী ও পুরুষের স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের সংখ্যাও শূণ্য।

এছাড়াও শিশুদের জন্য ২ হাজার ৬৫০ পিস এমএনপি (পুষ্টি পাউডার) থাকলেও, তার বিতরণও শুণ্য।

এছাড়াও একই ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম নামে আরো একজন পরিবার পরিকল্পণা পরিদর্শক রয়েছেন। তার অধীনে রয়েছেন ৬ জন কর্মী।

তারা মে মাসে ১ হাজার ২০২টি কনডম বিতরণ করেছেন। এছাড়াও কিছু সংখ্যক সুখি বড়িও বিতরণ করেছেন বলে মাসিক হিসেব প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তবে গাবুরার খোলসাবুনিয়া, বড় গাবুরা, চাঁদমুখোর ২০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কারো কাছেই পরিবার পরিকল্পনার কনডম পাওয়ার কথা জানা যায়নি। সরকারের এ ধরনের কার্যক্রমের কথা জানেই না অনেকে।

চাঁদমুখোর যুবক সামছুর দোহা (২৪) বাংলানিউজকে বলেন, সরকার থেকে যে এসব জিনিস (জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী) দেয় আজ প্রথম শুনলাম। আর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ভবনে তো প্রতি বুধবার ডাক্তার বসে জানি। এসব কিছুর অফিসের কথাতো জানি না।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় দিনমজুর দোহার। বর্তমানে তিন সন্তানের জনক। ঘের, নদী আর রাস্তায় কাজ করে সংসার চালান। বাংলানিউজকে বলেন, গরীবের ঘরে তিন সন্তান নিয়ে চলা কষ্ট। এর মধ্যে ঝড়-বাদল থাকেই।

দ্বীপের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে দুই সন্তান রয়েছে এমন ঘরের সংখ্যা পাওয়া যাবে না।

ইউনিয়ন পরিষদের হিসেবে, ২০১৫ সালে গাবুরায় মোট জনসংখ্যা ছিলো ৩৮ হাজার ৮২৫ জন।

তবে উপজেলা থেকে দেয়া জনসংখ্যা প্রতিবেদনে নিম্নমুখী জন্মহারের কথা  উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আজম টিটো বাংলানিউজকে বলেন, এখানে সিএআর (গণনার কাজে নিয়োজিত কর্মী) মাঠে না এসে রিপোর্ট দেয়। এ কারণে জনসংখ্যার সঠিক হিসেব নেই। তবে ভিজিএফ, উপবৃত্তি, প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি থেকে অনিয়িন্ত্রতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুষ্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী অলিউল ইসলাম অলি বাংলানিউজকে বলেন, এ উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মী রয়েছে। তবে মনিটরিংয়ের অভাবে কিছু জায়গায় কাজ হয় কম। জুন মাসে নতুন করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পাঠানে হয়নি গত মাসের মজুদ শেষ হয়নি বলে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।