ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

প্যাডের দায়ে পানির লগে যুদ্ধ

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
প্যাডের দায়ে পানির লগে যুদ্ধ ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা (বরগুনা) থেকে: ‘হগগোলে (সবাই) মাছ ধরতে নদী-সাগরে যাইতাছে, কিন্তু মোরা এহনও যাইতে পারি নাই। সিজন  শুরু হইয়া গ্যালেও টাহা-পয়সার অভাবে বোট হারার কামই (নৌকা মেরামত) শ্যাষ করতে পারি নাই।

তাই বোট এহনও পানিতে ভাসাইতেই পারি নাই’।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদীর কোল ঘেঁষে চরদুয়ানি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানি গ্রামের বাসিন্দা ও জেলে মো. বাদল নদী তীরে নৌকা মেরামতের কাজ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন।

কথায় কথায় তিনি বাংলানিউজকে জানান, টাকার জন্য কখনো মহাজন, কখনো বেপারী আবার কোনো কোনো সময় সমিতির দারস্থও হন।

এইবার টাকা জোগার করতে দেরি হওয়ায় মাছ ধরার মৌসুম শুরু হলেও এখনো বোট (নৌকা) মেরামতের কাজ করছেন তিনি। তবে অল্প দিনের মধ্যেই বোট মেরামতের কাজ শেষ করে পানিতে নামবেন বলে জানালেন বাদলের কাজে সহায়তাকারী দুলাল নামে অপর যুবক।

তিনি বলেন, ‘প্যাডের দায়ে এ গ্রামের লোকজন মাছ ধরার জন্য পানির লগে যুদ্ধ করে। সুতা, জাল, বোট, তেল সবকিছুর দামই বাড়তাছে কিন্তু বাড়ে না মাছের পরিমাণ। এইডা খালি দিন দিন কইমাই যাইতাছে। হ্যারপরও (তারপরও) নদী-সাগরে যাইয়া মাছ ধরার কাম করতে অয়’।

‘এ কাম না করলে নিজের ও পরিবারের লোকজনের প্যাডে কি দিমু। বাইচ্চা (বেঁচে) থাকতে অইলে তো প্যাড ঠাণ্ডা রাখতে অইবোই’।

স্থানীয় বোট মালিক ও মাঝি দেলোয়ারের ১৪ বছরের ছেলে শাকিল বাংলানিউজকে জানায়, তার বাবার বোট ও বোটে থাকা জাল এখন মেরামতের জন্য বলেশ্বরের পাশে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের পাশে এই খালে নিয়ে আসা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে মাছ ধরে বিক্রি করে কিছু অর্থ এসেছে। সামান্য সে অর্থ দিয়ে মালামালের যোগান দিয়ে সে সহ পরিবারের সবাই মিলে বোট ও জাল মেরামতের কাজ করছে। এতে শ্রমিকের মজুরি কমে গেছে বলে জানান এ কিশোর।

এদিকে, স্কুল জীবনের শুরুতেই মৎস্যজীবী বাবা জাফর জমাদ্দারের কাজে সহযোগিতা করছে ১৫ বছরের কিশোর রেজাউল। ১০ বছর বয়স থেকে সে বাবার সঙ্গে থাকছে। বর্তমানে সে নিজেই জাল বাওয়ার কাজ করতে পারে।

রেজাউল জানায়, তাদের মাছ ধরার ছোট বোটটি নিয়ে একদিনের জন্য তিনজন নদীতে যায়। যার অন্যতম এক সদস্য সে।

এতো অল্প বয়সে জেলের কাজ করার বিষয়ে রেজাউল বলে, সবকিছুই প্যাডের দায়ে করতে হয়। তাই মৌসুম জুড়ে নদীতে যাইতে হয়। কিন্তু আগের মতো হগোল সময় জালে আর মাছ পড়ে না। মাছ না পড়লে খরচের বোঝা খালি বাড়তেই থাহে। আর লোক নিয়া গ্যালে তার খরচও তো দিতে অইবো।

গ্রামের ষাটোর্ধ মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এহন আর আগের মতো জালে মাছ পড়ে না হ্যারপরও মাছের আশায় জাইল্যারা (জেলেরা) নদীতে জাল ফ্যালছে। একটা ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়া নদী বা সাগরে গ্যালাম আর যদি মাছ না পড়ে তাইলে ওই বোটের লগে দুই চাইরজন যারা থাহে হ্যাগো কপাল পুইড়া যায়’।

‘হ্যার উপরে দস্যু আতঙ্ক, বনবিভাগ ও মৎস্য বিভাগের নানান নিষেধাজ্ঞা তো আছেই। আর মাছ না পাইলেও বাইচ্যা তো থাকতে অইবো, হ্যার লইগ্যা মোগো ধার-দেনা করতেই অয়। ’

গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই এভাবে নৌকা নয়তো জাল ঠিক করার কাজ করছেন। সবার একই কথা আগের চেয়ে মাছের পরিমাণ কমে গেছে, তাই অর্থের যোগান কমে আসছে। অর্থের অভাবে সময়ের কাজ সময়ে এখন আর হচ্ছেনা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৯৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এএটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।