ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলে বিবর্ণ ঈদ!

সাজ্জাদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
উপকূলে বিবর্ণ ঈদ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: ভাঙন আতঙ্ক। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ বহু স্থাপনা মেঘনার পেটে।

ফসলি জমিতো গেলোই, শেষ ঠিকানা বাবা-দাদার ভিটেমাটি বিলীন হচ্ছে। ভাঙন এমনই ভয়াবহ বসতঘরটি সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। ঠিক এমই চিত্র লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা উপকূলে।

গেলো বছররের ঠিক এ সময়ে ঈদুল আজহার আয়োজনে যারা ব্যস্ত ছিলেন তারা এখন ভাঙনে নিঃস্ব। অনেকেই রাস্তার পাশে ও অন্যের পরিত্যক্ত জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এবার তাদের পরিবারে ঈদ আয়োজন নেই। পশু কোরবানি এখন তাদের কাছে স্বপ্ন।

ঈদ আয়োজন কিংবা পশু কোরবানি দিতে না পারাই শুধু তাদের আক্ষেপ নয়। ওদের হৃদয়ে ক্ষতের কারণ, ভাঙনে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাওয়ায়। স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদ করতে না পারায়।

এদিকে, টানা বর্ষণ ও জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। নদীতে ইলিশ নেই। হাতে কাজ নেই। ঘরে চাল ডাল নুন নেই। এমন দশায় ভাঙনের শিকার অসহায়দের ঈদ আনন্দ নেই।

রামগতি ও কমলনগর নদী ভাঙন কবলিত উপজেলা। দু’ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদে মেঘনা নদীর ভাঙন ভায়াবহ। প্রতিদিনই ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে বহু পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উপায় না থাকায় অনেকেই বেড়িবাঁধ ও রাস্তার পাশে কুড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। এ যেন বেঁচে থাকার শেষ প্রচেষ্টা। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রামগতি ও কমলনগরের মেঘনাপাড়ে ঈদ আসে। তবে এ ঈদ আনন্দের নয়, কেবলই কষ্টের।

কমলনগরের চর কালকিনি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার উল্যা বলেন, একাধিকবার মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। ভাঙনে পারিবারিক ও প্রতিবেশীদের বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন আর ঈদে আনন্দ খোঁজে পাই না।

সাহেবেরহাট এলার গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙনে সব শেষ। এখন রাস্তার পাশে কুঁড়েঘরে থাকতে হচ্ছে। পশু কোরবানি ও ঈদ নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কেবলই বেঁচে থাকার চেষ্টা।

পাটারিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. জাফর বাংলানিউজকে বলেন, মেঘনা নদী রাক্ষুসে রুপ নিয়েছে। ভাঙনে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের মাঝে ঈদ আনন্দ নেই।

কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল হক ফারুক রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে অসহায়দের মাঝে ১০ কেজি করে বিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়ছে।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন রোধে পার্শ্ববর্তী রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারে কাজ চলছে। আগামী মাস থেকে কমলনগরেও এক কিলোমিটারের কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।