ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

উপকূল থেকে উপকূল

প্লাবনে ম্লান নিঝুম দ্বীপের ঈদ আনন্দ!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৬
প্লাবনে ম্লান নিঝুম দ্বীপের ঈদ আনন্দ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিঝুম দ্বীপ থেকে ফিরে: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তাদের জীবন। তারাও চায় বছরের একটি দিন হলেও স্বস্তিতে থাকতে।

ঈদ আনন্দ উপভোগ করবে অন্যদের মতো। কিন্তু এবার আর তা সম্ভব হয়নি। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে বঙ্গোপোসাগর ও মেঘনার প্লাবনে হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে পুরো নিঝুম দ্বীপ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কেফায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় নামার বাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদটিও হাঁটু পানির নিচে। রাস্তাঘাট কোমর পানিতে। লোকালয় ছেড়ে যদি প্রকৃতির গহীনে ডুব দেওয়ার ইচ্ছে থাকে, তবে নিঝুম দ্বীপের বিকল্প নেই।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে ১৯৫০-এর দশকে এ দ্বীপটি জেগে ওঠে, দ্বীপটি মূলত বেশ কিছু চরের সমষ্টি। এর মধ্যে বয়ে চলেছে নদী আর খাল, যেন অবিকল সুন্দরবন। ফুরফুরে সামুদ্রিক বাতাস আর মনোলোভা প্রকৃতি মনে এনে দেবে দারুণ সুখের অনুভূতি। ভ্রমণ পিয়াসীরা যার নাম দিয়েছেন ‘ভার্জিন আইল্যান্ড’।

কিন্তু অপার সৌন্দর্যের এ দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য নেই কোনো বেড়িবাঁধ। যার কারণে এখানকার বাসিন্দারা নিত্য লড়াই করে জলোচ্ছ্বাস আর প্লাবনের সঙ্গে।

জোয়ার হলেই রাস্তা ঘাটে হাঁটু পানি, আর বন্যা হলে তো কথাই নেই, বাড়ি ঘর থাকে ডুবে। নিত্য জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভেঙে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামো। চারপাশে একটি বাঁধের জন্য চরম নিরাপত্তাহীনতায় নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা। পানিতে ডুবে রয়েছে স্কুলগুলোও। দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়, যেন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা।

তিনি আরও জানান, অমাবশ্যা-পূর্ণিমাতে এখানকার রাস্তা ঘাট দেখা যায় না, একেবারে তলিয়ে যায়। বসতভিটাগুলো থাকে ডুবন্ত। রোববার (০৩ জুলাই) সামান্য বৃষ্টিতেই বাজার ঘাট হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

৭ নম্বর ওয়ার্ড বন্দরটিলা এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার মো. মেহরাজ উদ্দিন প্রকাশ পিচ্চি মেরাজ বাংলানিউজকে জানান, নিঝুম দ্বীপের একটি অংশে সামান্য বাঁধ রয়েছে। বাকি পুরো দ্বীপ অরক্ষিত।

তিনি আরও জানান, বাঁধের ব্যাপারে একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। যার কারণে দিন দিন ভাঙছে দ্বীপটি।

সাগরপাড়ের বাসিন্দা সাইফুল বাংলানিউজকে জানান, গত রেয়ানুতে তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বাড়িঘর ছিল পানির নিচে। নিঝুম দ্বীপের কোনো পাশে বাঁধ নেই, যার কারণে আমাদেরকে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় ৷

এ বিষয়ে কথা হয় হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ রিপন বাংলানিউজকে জানান, নিঝুম দ্বীপ এলাকায় পানি উঠলেও কোথাও ভাঙছে না। বরং বেশ কিছু চর জাগছে। পানির স্তর নিম্ন করে আনার জন্য আমরা নেদারল্যান্ডের একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শের আলোকে কাজ করছি।

এ বিষয়ে সরকারকে একাধিকবার পরিকল্পনা পাঠিয়েছি। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি ৷

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৬
আরবি/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।