ঢাকা, রবিবার, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ০২ মার্চ ২০২৫, ০১ রমজান ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner

George_Orwell_inner

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৬তম কিস্তি

___________________________________

রেকর্ডস ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেকেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আঠারো ঘণ্টা করে কাজ করছে। দিনে দুই-তিন ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বটে তাও মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই। কারাগার থেকে তোষক এনে বারান্দায় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে গড়াগড়ি দিয়ে নেওয়ার জন্য। খাবার মিলছে স্যান্ডউইচ আর ভিক্টরি কফি। বেয়ারারা ক্যান্টিন থেকে ট্রলি ভর্তি করে কামরায় কামরায় ঘুরে বিতরণ করছে ওগুলো। সামান্য বিরতি নিয়ে উইনস্টন বিছানায় গা এলিয়ে আবার যখন ঢুলুঢুলু চোখ ডলতে ডলতে ফিরছে, দেখতে পাচ্ছে আরেক পশলা কাগজের বৃষ্টি এসে স্তূপ হয়ে বরফের মতো ঢেকে দিয়েছে ডেস্ক।

undefined



কাগজের স্তূপে অর্ধঢাকা পড়েছে স্পিকরাইট। আর মেঝেতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক কাগজ-পত্র। তার দায়িত্বই হচ্ছে হাতের কাজ শেষ করে ওদের আরও কাজ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে এই কাজ পুরোপুরি যন্ত্রনির্ভর নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নামটি পাল্টে দিয়েই কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিস্তারিত অংশে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে বাড়তি সতর্কতা, প্রয়োগ ঘটাতে হচ্ছে কল্পনানির্ভর তথ্যের। বিশ্বের একটি অংশ থেকে যুদ্ধকে অন্য অংশের দিকে ঘুরিয়ে দিতে ভৌগলিক জ্ঞান থাকাও জরুরি হয়ে উঠছে।

তৃতীয় দিনে তার চোখে অসহ্য রকমের চুলকানি শুরু হলো, কয়েক মিনিট পরপরই চশমার কাচ পরিষ্কার করতে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল পাথর ভাঙ্গার মতো গতর খাটুনি চলছে তার। যে কাজ প্রত্যাখানের অধিকার যে কারও রয়েছে, খ্যাপাটের মতো সেই কাজই তাকে করে যেতে হচ্ছে। স্পিকরাইটে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ, কালি-পেন্সিলের খোঁচায় লেখা প্রতিটি অক্ষর-চিহ্নই যে ডাহা-মিথ্যা তা মনে করার মতো সময়ও নেই, আর তাতে কাজ বিঘ্নিত করার সুযোগও নেই। বরং ডিপার্টমেন্টের অন্য সকলের মতো সেও একইভাবে উদ্বিগ্ন ছিল এই ভেবে যে, জালিয়াতি যা কিছু চলছে তার মধ্যে যেন এতটুকু খুঁতও না থেকে যায়।

undefined



ষষ্ঠদিনে নথি-পত্রে ঠাসা সিলিন্ডার ডেস্কে আসার মাত্রা একটু কমলো। টানা আধাঘণ্টাও কিছুই এসে জমা পড়ল না টিউবে। এরপর আরেকটি সিলিন্ডার এলো। এরপর আর কিছুই এলো না। চারিদিকেই ততক্ষণে কাজ কমে আসছে। গভীর কিন্তু গোপন একটা লম্বা নিঃশ্বাস বয়ে গেল গোটা ডিপার্টমেন্টে। বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়ে গেল, যার কথা কখনও বলাও হবে না। কোনও মানব সন্তানের পক্ষেই আর নথিভিত্তিক প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হবে না, যা দেখিয়ে সে বলতে পারবে কখনও কোনওকালে যুদ্ধ ছিল ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে।

অপ্রত্যাশিতভাবে বেলা ১২টায় ঘোষণা এলো মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মীর আগামীকাল সকাল পর্যন্ত ছুটি। বইয়ের যে ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে হাঁটছে উইনস্টন, সেটি যখন কাজ করেছে তখন দুই পায়ের ফাঁকে, আর যখন ঘুমিয়েছে তখন গায়ের নিচে রেখে দিত। মন্ত্রণালয় থেকে সোজা বাসায় ফিরে সেভ করে গোসল সারতে গিয়ে বাথরুমেই তার ঘুমিয়ে পড়ার দশা। পানিটা ছিল ইষদোষ্ণর চেয়ে একটু বেশিই গরম।

হাত-পায়ের জোড়াগুলোতে পটাস পটাস শব্দ তুলেই মি. চ্যারিংটনের দোকানের দোতলার সিড়ি ভাঙল উইনস্টন। ভীষণ ক্লান্ত কিন্তু এখন আর ঘুমে কাতর নয় সে। জানালা খুলে দিয়ে ছোট নোংরা তেলের স্টোভটি জ্বালিয়ে নিয়ে কফির জন্য কড়াইয়ে পানি বসিয়ে দিল। জুলিয়া এসে পড়বে: এর মধ্যে বইটি দেখা শুরু করা যায়। ভাঙা হাতলওয়ালা চেয়ারটিতে বসে ব্রিফকেসের ফিতা-বন্ধনী খুলতে শুরু করল সে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৮তম কিস্তির লিংক

undefined



বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।