George_Orwell_inner
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৪তম কিস্তি
___________________________________
অধ্যায় ৯ |
থকথকে একটা অবসাদগ্রস্ততা যেন পেয়ে বসেছে উইনস্টনকে। অবসাদগ্রস্ততা শব্দটিই সঠিক হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এটিই তার মাথায় এলো। শরীরটা যেন জেলির মতো থকথকে আর স্বচ্ছ লাগছে। তার মনে হচ্ছিল, হাত তুলে দেখলে এ ভেতরটা দেখা যাবে। ভেতরের রক্ত আর রক্ত-পদার্থগুলো গলগল করে বের হয়ে আসবে, পড়ে থাকবে কেবলই শিরা উপশিরা, হাড় আর চামড়ার একটি কাঠামো। ইন্দ্রিয়বোধগুলোও বিবর্ধিত, কাঁধের ওপর আলখেল্লায় অস্বস্তি, মেঝেতে পায়ের তলায় খচখচ। এমনকি সামান্য নড়াচড়ায় হাতের জোড়াগুলো ফট ফট শব্দ করে ফোটে।

undefined
পাঁচ দিনে নব্বই ঘণ্টা কাজ করেছে সে। কেবল তার নয়, মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মীর একই অবস্থা। এখন অবশ্য সব শেষ। বাস্তবিক অর্থে এখন আর তার করার কিছুই নেই। বলার মতো পার্টির কোনও কাজ নেই, অন্তত আগামীকাল সকাল অবধি হাত পুরোই খালি। নির্দ্বিধায় গোপন আস্তানায় ছ’টি ঘণ্টা, আর পরের আরও ন’টি ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে শুয়ে। ধীরে ধীরে বিকেলের শান্ত রোদে একটা জীর্ণ সড়ক দিয়ে হেঁটে চলেছে। গন্তব্য মি. চ্যারিংটের দোকান। তবে এক চোখ পুরোই খোলা রাখা টহলদারদের গতিবিধিতে। যদিও যুক্তিহীনভাবে সে জানে আজ এই বিকেলে কোথাও কোনও বাধার মুখে পড়তে হবে না তাকে। হাতের ভারী ব্রিফকেসটি প্রতিবার পা ফেলার সাথে হাঁটুতে আঘাত দিচ্ছে। এতে তার পায়ের চামড়ায় এক ধরনের চুলকানির অনুভূতি হচ্ছে। ব্রিফকেসের ভেতরে বইটি। এখন থেকে আরও ছয়দিন ওটি তার দখলে থাকবে। তবে এখনও বইটি খোলা হয়নি, দেখাও হয়নি ওটি দেখতে কেমন।
ঘৃণা সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনের কথা। মিছিল হয়ে গেছে, বক্তৃতার পালাও শেষ, চিৎকার চেঁচামেচিও থেমেছে। সঙ্গীত, ব্যানার, পোস্টার, সিনেমা, ভীতিকর ওয়াক্সওয়ার্ক, বাদ্য বাজনা আর কর্কশ শব্দ সম্প্রচার, ভারী বুটের কুচকাওয়াজ, ট্যাংকের সারি, উড়োজাহাজের গর্জন, গুলির ফটাস ফটাস শব্দে কেটেছে টানা ছয়টি দিন। উত্তেজনা যখন তুঙ্গে আর ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে ঘৃণার পারদ সর্বোচ্চ মাত্রায় তখন ভিড়ের মাঝে প্রতিটি মানুষেরই ভাবনা বিচারের শেষ দিনে যে ২,০০০ ইউরেশীয় যুদ্ধাপরাধী তখনও বধের অপেক্ষায় তাদের হাতের নাগালে পেলে ছিন্নভিন্ন করে দেবে—ঠিক তখনই ঘোষণা এলো ওশেনিয়ার যুদ্ধ ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে নয়। ওশেনিয়ার যুদ্ধ চলছে ইস্টেশিয়ার বিরুদ্ধে। ইউরেশিয়া মিত্রপক্ষ।

undefined
আর এই ঘোষণা এলো কোনও কিছু পরিবর্তনে সামান্য স্বীকারোক্তি ছাড়াই। সর্বত্র একযোগে একই আকস্মিকতায় সবারই জানা হয়ে গেল ইউরেশিয়া নয় ইস্টেশিয়াই শত্রু। ঘটনাটি যখন ঘটল উইনস্টনও তখন সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি চৌরাস্তায় বিক্ষোভ কর্মসূচির মাঝে। তখন রাত নেমে গেছে। সাদা মুখগুলো আর উজ্জ্বল ব্যানারগুলো আলোর বন্যায় ভাসছিল। গোটা চৌরাস্তা জুড়ে তখন কয়েক হাজার জনতা। একটি ব্লকে স্পাইজের ইউনিফর্ম পরে হাজার খানেক শিশু-কিশোরও রয়েছে। উজ্জ্বল আলোর প্রক্ষেপণে জ্বলজ্বলে মঞ্চ থেকে ইনার পার্টির এক বক্তা, খর্বাকায়, কিন্তু খাটো বপুর তুলনায় অপেক্ষাকৃত লম্বা দুটি হাত আর গুটিকয় অবিন্যস্ত চুলে বড় টেকো মাথা নেড়ে নেড়ে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
রামপেলস্টিলস্কিন (জার্মানি রূপকথার গল্পের এক খর্বাকায় চরিত্র)মার্কা বপুটি ঘৃণায় যেন বেঁকে বেঁকে যাচ্ছিল। এক হাতে মাইক্রোফোনটির গলা টিপে ধরে হাড্ডিসার লম্বা বাহুর শেষে আর হাতটি দিয়ে আক্রোশে মাথার ওপর বাতাস খামচে খামচে ধরছিলেন। তার কণ্ঠস্বর ধ্বনিবিবর্ধকে আরও ধাতব হয়ে ফুটছিল, তাতে ধ্বংসযজ্ঞ, বিতারণ, লুটতরাজ, ধর্ষণ, কয়েদী নির্যাতন, বোমাবাজি, মিথ্যাচার, রটনা, অন্যায় আগ্রাসন, সন্ধিভঙ্গের মতো অগুনতি অপরাধের তালিকা আরও নৃশংসভাবে প্রকাশ পেতে থাকে। মাতাল চিৎকারে বাস্তবিক অর্থে তখন আর তার কথা কারও কানে পৌঁছার মতো অবস্থা ছিল না।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৬তম কিস্তিে লিংক

undefined
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫