ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

অ তে অশৌচ — রাজীবের জন্য এলিজি

উম্মে রায়হানা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
অ তে অশৌচ — রাজীবের জন্য এলিজি রাজীব আশরাফ ও উম্মে রায়হানা | ছবি: হোসেন আতাহার

তোর নামে গান

আমি লিখতে চাই
আমি বলতে চাই
আমি তুমুল নেশা করে
টলতে চাই

আমার পায়ের নখ থেকে
মাথার চুল
আজ নেশায় ভর করে
করুক ভুল

মাশুল দেবো আমি
সেই ভুলের
পড়েও যায় যদি
ফুল চুলের

তোর নামেই গান হবে
একশো এক
গাইবো লোক ডেকে
সবাই দ্যাখ

তোর জীবনে তুই ছিলি
একনায়ক
তোর মুকুটে আমিও যে
এক পালক

আজ তোর নামেই
হোক সবার লাভ
শুনতে হবে না
আমার বিলাপ

আমি কাঁদতে চাই
করে আর্তনাদ
বিষাদ দিন শেষে
নামলে রাত

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩



উম্মে মরফিন

বৃষ্টি এখনও হচ্ছে, থেমে থেমে
ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে যাই নেমে—
আজ রাতে যাই যেদিকে দু’চোখ যায়
ইচ্ছেরা সব নিদারুণ, অসহায়—
মাথার ভেতর শূন্য, শুকনো—ধু ধু
মাঝে মাঝে তবু চোখ ভিজে আসে শুধু!
চোখের কী দোষ! চোখের মধ্যে মন,
মনে পড়ে যাবে কোন কথা যে কখন!

তুই যে তখন বুকের মধ্যে শ্বাসের
বাতাস নিয়ে, দিচ্ছিলি হাড়মাঁসে—
হাঁপরের মত নড়েছিলো কি পাঁজর?
দেহের খাঁচায়, আত্মা ছেড়েছে ভর!
তারপর ঠিক কোন মুহূর্তে তুই
ঠিক করেছিলি, এবার কবরে শুই!
মাটির তলায় গতজন্মের ঘুম
কোন কথা নেই, নিশ্চুপ নিঝুম—
আমারও তন্দ্রা ভেঙ্গেছিলো সে সময়
বুঝি নাই আমি, কেন যে এমন হয়!
মনে মনে তুই ডেকেছিলি কি আমাকে?
শ্বাসের জন্য লড়াই করার ফাঁকে!

আমার একটা নাম ছিলো তোর কাছে,
ছিলো নয়, সেই নামটা এখনও আছে!
যদিও তুই আর ডাকবি না কোনো দিন
বন্ধুরা ডাকে, তোর উম্মে মরফিন।
মরফিন দিয়ে কী হয়, কে-ই বা জানে!
তুই বলেছিলি অন্য একটা মানে—
‘তোমার মধ্যে নেশা আছে, মুমু জানো!
খুব করে টানে, যায় না তো সামলানো’
আমি সে কথায় পাত্তা দিইনি মোটে
তোর সাথে এটা যখন তখন ঘটে—
প্রেমে পড়ে যাস হঠাৎ দিকবিদিক,
ঘোষণা করিস, লোকে দিক যত ধিক!
যতটা না ঘটে, তারও চেয়ে হামেশা
বাড়িয়ে বলিস, নারী হোক আর নেশা!

এই দেখ, আমি লিখছি বর্তমানে
গতকাল এসে বলছে আমার কানে—
রাজীব তো আর মাটির ওপর নেই
এই সব কিছু ‘ঘটেছিলো’ অতীতেই!
সময় কেমন গুলিয়ে গেলো আমার
দিন আর রাতে ফারাক নেই যে আর—
বিলাপ করিনি, করিনি তো হাহাকারও
হাসিমুখে আমি শক্ত হচ্ছি আরও—
স্থির হয়ে আছে মুহূর্ত আর পল
কী করবো আমি, রাজীব, আমাকে বল!

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩



অশৌচ

তোর সাথে আমাদের
যত যোগাযোগ
ঠিক ভুল বুঝবে না
বাইরের লোক
তোর মতো ভাবেওনি
এ সময়, স্থান
তবুও তো সকলেই
গায় তোর গান
গান থেকে স্লোগানেও
বাজে তোর বাণী
তুই যে কেমন কবি
আমরা তো জানি
বন্ধুরা আরও বেশি
ভালোবাসা দেবে
এত কিছু লিখেছিস
এই কথা ভেবে
ঘরময় একদিন
ছিলো তোর স্মৃতি
তুই চলে যাবি
ছিলো সব প্রস্তুতি
তবুও তো প্রতিদিন
জলে ভরে চোখ
তুই নেই বলে রোজ
নিদারুণ শোক
তারপর নিজেকেই
বলি, ‘চোখ মোছ’
তুই মরে গেলে হয়
আমার অশৌচ

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩



সেপ্টেম্বর রেইন

পথে নেমে থামি অকাল বর্ষা দেখে
ঘন বর্ষণ, মেঘ ডাকে থেকে থেকে
আকাশটা ঘন নীল হয় এই কালে
সাদা মেঘ উড়ে বেড়ায় দুলকি চালে—
কিন্তু এ যেন শুরু হয়েছে শ্রাবণ
সেপ্টেম্বরে বাদলা হয় এমন!

আজকে তো তোর স্মরণসভা হবে
বন্ধুরা আজ শুধু তোর কথা কবে
তোর গল্প তো ফুরাবে না কোনদিন—
তোর কাছে আছে সবার অনেক ঋণ!
জানি না তুই কবে কী দিয়েছিস কাকে
অনেক কবিতা দিয়েছিলি তো আমাকে!

আমার একটা গোলাপি ওড়না ছিলো
তোর কাছে ছিলো অনেক অন্তমিলও
ওড়নাসহই তোর প্রেমে হবো খুন
বিধ্বংসী হবে কোন নিরীহ উনুন—
এমন কিছুই লিখেছিলি কবিতাতে
পুতুল ছিলো তো শব্দেরা তোর হাতের!

কবিতাগুলোও হারিয়েছে তোর মতো 
চোখে নিয়ে পাখি না হওয়ার ক্ষত
তারপরও পড়ে আছে কত অক্ষর
তোর কথাতেই মুখরিত এ শহর!
বৃষ্টি নামুক আসুক ঝড় বাদল
আমাদের বুকে আছে আরও বেশি জল
কান্না ফুরানো আদৌ কি সম্ভব!
আজ তোর নামে হোক খুব কলরব!

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।