ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আউশ চাষে লোকসান, তবুও আশাবাদী কৃষক!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
আউশ চাষে লোকসান, তবুও আশাবাদী কৃষক! আউশ ধান, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: প্রত্যেক বছর মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত রোপা আমন মৌসুম চলে। আবার মধ্য অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই ছয়মাস বোরো মৌসুম হিসেবে পরিচিত। দু’মৌসুমের মাঝের সময়কে রোপা আউশ মৌসুম বলে। এই ফাঁকা সময় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে কোনো ফসল চাষ করতেন না কৃষকরা। এ সময় উত্তরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকতো।

প্রায় এক যুগ আগের হিসেবটা এমনই ছিল। কৃষি বিভাগ থেকে এমনই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

কিন্তু কালের আবর্তে নিজেদের প্রয়োজনে সেই হিসেবটা একবারে পাল্টে দিয়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। আগে রোপা-আউশ মৌসুম এলে জমিতে ফসল বুনে দিতেন কৃষকরা। এখন সেই জমি চাষ করে সেখানে তারা রোপা আকারে করছেন ধান চাষ। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
 
শুধু বগুড়ার ১২টি উপজেলায় রোপা-আউশ মৌসুমে ২৬ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের স্থানীয় ও হাইব্রিড ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি ধান-২৬, ২৭, ২৮, ৪৮, নেরিকা, বীণা-৭, পারিজাত ও জিরাশাইল অন্যতম। ফলনও বাম্পার হয়েছে। তবে দামে মার খাচ্ছেন কৃষক। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।
ক্ষেত থেকে ধান কাটছেন কৃষকরা, ছবি: আরিফ জাহানতবু আশাবাদী কৃষক। কেননা ফসলের পেছনে ধাপে ধাপে ব্যয় করতে হয়। আর তা বিক্রি করে এক মোটে টাকা পাওয়া যায়। সেই টাকা পরবর্তী মৌসুমের ফসল চাষ করতে বিরাট কাজ দেয়।

আনছার আলী, সাইফুল ইসলাম, আনিছুর রহমান বাবলুসহ একাধিক আউশ চাষি বাংলানিউজকে হতাশা নিয়েও এমন আশার কথা শোনান।
 
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, সদর-শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, গাবতলী ও শেরপুর উপজেলায় এ মৌসুমের ধান বেশি চাষ হয়। এছাড়া অন্য উপজেলার কৃষকরাও এখন কমবেশি রোপা-আউশ ধান চাষ করে থাকেন।
 
তিনি জানান, এ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯১০ মেট্রিকটন। জেলার প্রায় ৯৫ ভাগ জমির ফসল ইতোমধ্যেই কাটা মাড়াই শেষ করেছেন কৃষকরা। প্রতিবিঘায় জাতভেদে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ মণ হারে ফলন হয়েছে। ধান মাড়াই করছেন কৃষকরা, ছবি: আরিফ জাহানসব ব্যয় মিলে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হয়েছে কৃষককে। বর্তমান প্রতিমণ ধান ৬শ থেকে ৭শ টাকা মণ হিসেবে বেচা-বিক্রি হচ্ছে। এতে অবশ্য কৃষককে কিছুটা লোকসান গুণতে হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা। এবার এই ফসল চাষের জন্য আবহাওয়াসহ সবকিছু কৃষকের অনুকূলে ছিল। যে কারণে ফলন বেশ ভাল হয়েছে যোগ করেন কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল।
 
কৃষক মোবারক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবার ৩০ বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান লাগিয়েছেন। গতবার যা ছিল ১৫ বিঘা। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এই ফসল চাষ করে আসছেন।
 
লুৎফর রহমান, আবু সাঈদ, শহিদুল ইসলামসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, আশির দশকে রোপা আউশ মৌসুমে খুব অল্প পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করা হতো। আবার যারা চাষ করতো সেটারোপা আকারে নয়। জমি প্রস্তুত করে সেখানে ধান বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হতো।
 
কিন্তু ’৯০ সালের পর থেকে এখানকার কৃষকরা বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন জাতের ধান এই ফাঁকা সময় রোপা আকারে চাষ শুরু করেন। সেই থেকে এখানকার কৃষকরা আর পিছু ফিরে তাকায়নি। ধীরে ধীরে চাষের জমির আওতা বাড়ানো অব্যাহত রেখেছেন। তবে এবার তাদের ধান বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে। এরপরও বসে থাকার চেয়ে কোনো কিছু করার ভাল-এমন চিন্তা থেকে তাদের মতো কৃষকরা রোপা-আউশ মৌসুমের ধান চাষ অব্যাহত রেখেছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।