ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘ভারত থেকে যেন গরু না আসে’

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
‘ভারত থেকে যেন গরু না আসে’ গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: ‘সারাবছর ধরে কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজা করেছি। যা শুনছি, বাজারে দামও ভাল। কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে- যদি ভারত থেকে গরু আসে। আমরা যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে খামার তৈরি করেছি, আমাদের আর কিছুই থাকবে না। গতবছর ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে ভারত থেকে গরু আসায় দাম না পেয়ে খামারিরা পথে বসেছিল। ওইবার খরচের টাকাও ওঠেনি।’

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নিজ খামারে শেষ সময়ে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সাতক্ষীরা পৌরসভার কুখরালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম এভাবেই জানান তার শংকার কথা।  

শুধু আব্দুল হাকিম নয়, একই শংকা অন্য সব খামারির।

তাদের দাবি, ‘ভারত থেকে যেন গরু না আসে। ’গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা।                                          ছবি: বাংলানিউজখামারিদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে জানান, ঈদুল আজহায় কোরবানির চাহিদা মেটাতে সাতক্ষীরা জেলায় ৬০ হাজারেরও বেশি গরু-ছাগল-ভেড়াসহ অন্যান্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায়ও পাঠানো সম্ভব। এমতাবস্থায় ভারত থেকে গরু আসলে খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হবে।

সূত্র মতে, চলতি বছরে কোরবানির জন্য জেলার ১০ হাজার ৫৫২টি খামারে ৬০ হাজার ৪৫০টি গরু, ছাগল, ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে ৩৪ হাজার ৮৬টি গরু ও ২৬ হাজার ৩৬৪টি ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলায় ২০১৬ সালে কোরবানির পশুর উৎপাদন ছিল ৪০ হাজার ৩৬৭টি। ২০১৭ সালে পশু উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৯৯টি। আর চলতি বছরে তা বেড়ে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত থাকলেও শেষ সময়ে সীমান্ত দিয়ে ভারতের গরু-মহিষ আসার শংকায় রয়েছেন খামারিরা। গতবছর জেলার খামারিরা গরুর ভালো দাম পাওয়ার পরেও শেষের দিকে বেশ কিছু গরু-মহিষ ভারত থেকে আসায় হঠাৎই দাম কমে যায়। এতে অনেকেই লোকসানের শিকার হন। গরুকে খাবার দিচ্ছেন একজন খামারি।  ছবি: বাংলানিউজখোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার মোটাতাজাকরণ খামারও গড়ে উঠেছে। এসব খামারে দেশি ও শংকর জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে বছরজুড়ে।  

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বড় পশুর হাট পাটকেলঘাটা বাজার, দেবহাটার পারুলিয়া, আশাশুনির বুধহাটা, সাতক্ষীরা সদরের আবাদের হাট। এসব পশুর হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে ইতোমধ্যেই কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে পছন্দ অনুযায়ী পশু দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। আবার ব্যক্তি বিশেষ কেউ কেউ নিজেরা বাড়িতে গিয়ে পছন্দের গরু-ছাগল কিনে রাখছেন।

জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নলতা গ্রামের আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবার তিনটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এসব গরুর দাম হেঁকেছেন লাখ টাকারও বেশি।

তিনি বলেন, যেহেতু সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গরু আসছে না- সেহেতু দেশিয় গরুর চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। তবে শেষ সময়ে ভারত থেকে গরু ঢোকার প্রবণতা থাকে- আর তা হলে আমরা শেষ হয়ে যাব।  

সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, তিনি গরু পালন করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রতিবছর এসব গরু কোরবানির ঈদে বিক্রি করা হয়।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জেলার ভাতশালা, হাড়দ্দাহ, বৈকারি, কুশখালী, তলুইগাছা, কাকডাঙা, ঘোনা, গাজীপুর, ভোমরা, মাদরা, হিজলদী, চান্দুড়িয়াসহ সীমান্তের প্রায় ১৭টি পয়েন্ট দিয়ে আগে প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার ভারতীয় বিভিন্ন জাতের গরু বাংলাদেশে আসতো। আর এসব গরু চলে যেতো জেলা এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে গত কয়েক বছর সেই মাত্রা অনেকখানি কমেছে।

সাতক্ষীরা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ জানাচ্ছে, সাতক্ষীরার চারটি করিডোরের আওতায় ’১৩-১৪ অর্থবছরে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু এসেছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার, ’১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৯৪টি, ’১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৬৭০টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৮টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৬২টিতে। যা গেলো বছরগুলোর তুলনায় খুবই কম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সীমান্তবাসী বাংলানিউজকে বলেন, ভারত কঠোর হওয়ায় জেলার সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে কিছু গরু আসে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে সেগুলোর কারণে বাজারে মোটেই প্রভাব পড়বে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে জানান, ভারত থেকে গরু না আসায় দেশের খামারিরা লাভবান হচ্ছে বলেই পশু পালনের উদ্যোগ বাড়ছে। এটা ইতিবাচক। কিন্তু ভারত থেকে গরু আসলে দেশিয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুবেদার মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত খাটালগুলোতে সামান্য সংখ্যক গরু উঠছে। ভারত এ ব্যাপারে কঠোর।

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।