ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ভূমিহীনদের মিষ্টি কুমড়া মালয়েশিয়ার বাজারে

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
ভূমিহীনদের মিষ্টি কুমড়া মালয়েশিয়ার বাজারে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তিস্তার পাড় (রংপুর) ঘুরে: ভূমিহীনদের কাছে দিনটা একটু আলাদা করেই ধরা দিলো। তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ চরে তাদের চাষ করা মিষ্টি কুমড়া দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যাওয়ার আনন্দের ঢেউ যেন থামলোই না।


 
ভালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি নিজেদের হাতের পরশ পাওয়া কুমড়া বিদেশিদের পাতে পড়বে- এর আনন্দ সত্যিই আলাদা। রংপুর জেলার কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তৃণমূল এসব চাষির চোখে-মুখে ফুটে উঠলো বাধহারা আনন্দ।
 
প্রথমবারের মতো গত রোববার (২২ মে) উত্তরবঙ্গের তিস্তা নদীর চরে চাষ করা এই মিষ্টি কুমড়া মালয়েশিয়ায় রফতানি হয়। তাই এর মূল কারিগর ভূমিহীন চাষিদের জন্য দিনটি ছিল অন্যরকম।
রোববার (২৯ মে) দ্বিতীয় দফায় মালয়েশিয়ার পথে যাচ্ছে মিষ্টি কুমড়া।
 
কাউনিয়া উপজেলার তালকুশাহবাজ গ্রামের ভূমিহীন মিষ্টি কুমড়া চাষি নরেশ চন্দ্র বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তারা জানতে পারেন, এবার তাদের মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রফতানি হবে। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে দিনটি তাদের জন্য ছিল সম্পূর্ণই আলাদা।
 
মো. মতিয়ার রহমান জানান, একদিকে ভালো দাম পাবেন, অন্যদিকে নিজেদের কাছে গর্ব যে, তাদের চাষ করা মিষ্টি কুমড়া বিদেশিরা খাবেন। এটা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তৃপ্তির হাসির রেখা ফুঠে ওঠে তার মুখে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূমিহীনদের এসব স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়েছে বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের উদ্যোগে তিস্তার  চরে মিষ্টি কুমড়া চাষের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে। এবার সংস্থাটি তৃণমূল চাষিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়।
আন্তর্জাতিক এই সংস্থার উদ্যোগ ও সহায়তায় গত কয়েক বছর ধরে ভূমিহীনরা চর এলাকায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন। এতে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের এসব মানুষদের জীবনের মানও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। দারিদ্র্যের শিকল ভেঙে স্বচ্ছলতায় ফিরছেন তারা।
 
বাংলানিউজের সরেজমিনে তিস্তার পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে পাওয়া গেলো মিষ্টি কুমড়া চাষের সফলতার গল্প। এ সফলতা পাওয়ায় অল্প আয়ের এসব মানুষদের জীবনের গতিই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
 
বিদেশে রফতানি হবে বলে ভালো মানের মিষ্টি কুমড়া বাছাই করছিলেন আমেনা বেগম।

তিনি জানান, অনেক সময়ে ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। এতে যা আয় হওয়ার কথা তা হয় না। বিদেশে রফতানির সুযোগ করে দেওয়ায় আর এ সমস্যা থাকবে না। অনেক বেশি দাম পাওয়া যাবে। এটা তাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
মণ্ডুরাম চন্দ্র বর্মণ, মেনেকা বালাসহ একাধিক ভূমিহীন চাষি এই প্রতিবেদকে জানালেন, সুযোগ পেলে তারা সব ধরনের পরিশ্রম করতে প্রস্তুত। সামান্য সহযোগিতায় তাদের জীবন বদলে যেতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ এই মিষ্টি কুমড়া চাষ। এখন আর এ পাড়ায় কেউ না খেয়ে থাকেন না। অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকেই হতাশ হতেন। কিন্তু এখন কারও মাঝে হতাশা নেই।
 
গঙ্গচড়া উপজেলায় তিস্তার পাড় ঘেঁষে হাটা দিতেই পাওয়া গেলো চড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষে তৃণমূলদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
 
সার, ওষুধ, বীজসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন থেকে দেওয়া হয়। তাদের শুধু পরিশ্রম। এতো ভালো সুযোগ পাওয়ার কারণেই তাদের জীবন বদলে গেছে। ভালো দাম পাওয়া নিয়ে হতাশা আর ক্ষোভ ছিলো, তাও আজ থেকে দূর হলো।
 
প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশের এক্সট্রিম প্রোভার্টি প্রোগ্রামের ম্যানেজার (কৃষি) নির্মল চন্দ্র বেপারী বাংলানিউজকে জানান, তিস্তার চড়ে চাষ করা এসব মিষ্টি কুমড়া খেতে খুবই সুস্বাদু। এছাড়া কীটনাশক ও কোনো ধরনের ক্ষতিকারক ওষুধও ব্যবহার করা হয় না। অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। ফলে দেশ ও বিদেশের বাজারে এসব কুমড়ার চাহিদা অনেক বেশি।
 
তিনি জানান, প্রথম দফায় গত ২২ মে ১১ টন এবং দ্বিতীয় দফায় রোববার (২৯ মে) ১৯ টন ৩৫০ কেজি মালয়েশিয়ায় রফতানি হলো। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। কৃষকরা যেন পণ্যের ন্যায্য দাম পান সেজন্য দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশের বাজারে কৃষকদের সংযোগ স্থাপন করেন তারা।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের নদী ভাঙন কবলিত এলাকার এক হাজার চাষির জীবন মান উন্নয়নে সিকিউরিং ওয়াটার ফর ফুড প্রোজেক্ট অব ইউএসএআইডি বাজারভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে একটি বাণিজ্যিক মডেল তৈরিতে কাজ করছে। এতে টেকসই ফসল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
একে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।