ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

গোপালগঞ্জে জমিতে পানি, তাই ডালিতে সবজি চাষ

একরামুল কবীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
গোপালগঞ্জে জমিতে পানি, তাই ডালিতে সবজি চাষ

গোপালগঞ্জ: পানির ওপর শক্ত নেট দিয়ে বানানো মাচা, সেই মাচা থেকে ঝুলে আছে লাউ, কুমড়া, শসা, চিচিঙ্গাসহ নানা জাতের সবজি। তবে এসব সবজির গাছ কিন্তু কোনো জমিতে লাগানো নয়।

জলাবদ্ধ জমির ওপর বাঁশে বাঁধা ডালিতে মাটি রেখে তাতেই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা।  

এভাবে সবজি চাষ হচ্ছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বালাডাঙ্গা গ্রামের পূবের বিলে প্রধামন্ত্রীর পৈত্রিক জমিতে।  

গোপালগঞ্জে অনাবাদি ও জলাবদ্ধ জমিতে সমন্বিত কৃষির আওতায় ডালি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে সাড়া জাগিয়েছে কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতিতে পতিত ও জলাবদ্ধ জমি পরিষ্কার করে পানির ওপর ডালি স্থাপন করে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। কৃষি বিভাগের এ নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার কৃষক। কৃষি বিভাগের ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফলতা মিলেছে।  

আগামীতে সারা জেলায় ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি বিল। এর মধ্যে পূবের বিলের অধিকাংশ জমি জলাবদ্ধ, পতিত ও অনাবাদি থাকত। বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকা জমি আর শুকনো মৌসুমে হাঁটু বা কোমর পানি থাকায় সেখানে কোনো ফসল উৎপাদন হতো না। বিগত ৫০ বছর ধরে চাষাবাদ না হওয়ায় জমিগুলো পতিত বা অনাবাদি হয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার ঘোষণা দেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচানী এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার উন্নয়ন প্রতিনিধি সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বালাডাঙ্গা গ্রামের পূবের বিলে প্রধামন্ত্রীর পৈত্রিক জমিতে বাঁশের তৈরি বানা দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ শুরু হয়। এর মধ্যে ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করা হয়। এছাড়া রাস্তার খাদে গোড়া পদ্ধতিতে ও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মশলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।   
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পানির ওপর বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝোলানো হয়েছে বাঁশ আর নেট দিয়ে তৈরি করা ডালি। তার ওপরে তৈরি করা হয়েছে নেটের তৈরি মাচা। সেখানে থরে থরে ঝুলছে লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গে, ধুন্দলসহ নানান ধরনের সবজি। নতুন এ পদ্ধতিতে চাষ দেখতে প্রতিনিয়ত আসছেন এলাকার কৃষকরা।  

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জোয়ারিয়া গ্রামের তপন বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ দাস, একই উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের সামিউল ফকির, মধুমঙ্গল দাস এবং বালাডাঙ্গা গ্রামের অমিত বিশ্বাস বলেন, কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আমরা ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ শিখেছি। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। ফলনও আশানুরূপ। এ পদ্ধতিতে আগামী বর্ষা মৌসুমে আমরা আমাদের জলাবদ্ধ পতিত জমিতে চাষাবাদ করব। এ পদ্ধতিতে রাসায়সিক সার ও কীটনাশক লাগে না। আর একবার শুরু করলে দুই বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
 
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে যখন চাষাবাদ শুরু করি, তখন এলাকার মানুষ আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করত। সেখানে আমরা নানা জাতের সবজি ফলিয়ে সফল হয়েছি। আগামীতে ব্যাপক আকারে শুরু করব।

গোপালগঞ্জ খামারবাড়ি উপপরিচালক মো. আব্দুল কাদের সরদার বলেন, ডালি পদ্ধতিটা গোপালগঞ্জে মডেল হিসেবে শুরু করা হয়েছে। শুরুতে আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছি। এটা দেখে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে ডালি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে শুধু টুঙ্গিপাড়া নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হবে।  
 
ভাসমান বেডে মসলা জাতীয় ফসল চাষ ও ডালি পদ্ধতির উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের পর কচুরিপানা পচা মাটিতে সবজি লাগানোর ফলে অর্গানিক সার পাওয়া যায়। আর এটা ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা হয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন।  

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর তিনি কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার পতিত ও জলাবদ্ধ জমি চাষের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেন। লাউয়ের সিজনে লাউ হবে, চিচিঙ্গার সিজনে শুধু চিচিঙ্গা হবে আর কিছু হবে না, এ ধারণা এখন বদলেছে। এ পদ্ধতিতে সব ধরনের সবজি ও ফলমূল সারা বছর পাওয়া যাবে। বর্ষাকালে আমাদের দেশের অধিকাংশ জমি তলিয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে বর্ষাকালে ওই সব জমিতে সবজি চাষ করতে পারি। নাটোরের চিনিডাঙ্গা বিলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রথম এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে। সেটা সফল হওয়ার পরে আমরা এখানে শুরু করেছি। এখানে সফল হওয়ার পর কোটালীপাড়া, সদর ও মুকসুদপুর সব জায়গায় এটা ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে শুধু একটা না লাউ, শসা, চিচিঙ্গা, কুমড়া সমস্ত রকম সবজি উৎপাদন করা যাবে। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন এবং খুশি হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা,  আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।