ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শীতের ফুলকপি গরমে, সৈয়দপুরে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
শীতের ফুলকপি গরমে, সৈয়দপুরে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

নীলফামারী: শীতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি এই প্রচণ্ড গরমে মিলছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। অসময়ের এই সবজিতে বাজার ভরে গেছে।

দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। পাইকাররা ক্ষেতের মাঠ থেকে ট্রাকে করে এই কপি নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কৃষি বিভাগ এ ধরণের উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করার চিন্তাভাবনা করছেন।  

সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের শ্বাসকান্দর, বেংমারী, তালতলাপাড়া, বাঁশেরতল, কাঁঠারিপাড়া, অচিনার ডাংগা, পোড়ারহাট প্রভৃতি এলাকা আগে থেকেই সবজির গ্রাম হিসাবে পরিচিত।  

এসব এলাকার কৃষকরা আগাম সব ধরণের সবজি চাষ করে লাভবান হয়ে আসছেন। এবারে তারা প্রথম শীতের ফুল ও বাঁধা কপি চাষ করেন। নিজেদের চেষ্টা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই ফসলে সফলতা আনেন এবং বর্তমানে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।  

বাঁশেরতল এলাকার কৃষক মাহতাব উদ্দিন। মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করে বাজিমাত করেছেন। ইতোমধ্যে জমির অর্ধেক ফুলকপি বিক্রি করেছেন। জমি থেকে পাইকাররা ৮০ টাকা কেজি দরে সেই কপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ৩০ শতক জমিতে লাগানো ফুলকপির মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার টাকায়। ফুলকপির চারা থেকে গাছে ফুল আসা পর্যন্ত কৃষক মাহতাবের খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। খরচ বাদে শুধু ফুলকপি বিক্রি করে তিনি আয় করবেন লাখ টাকা। খুচরা বাজারে সেই ফুল ও বাঁধা কপি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।  ফুলকপির জমিতে সাথী ফসল মরিচ চাষ করায় মরিচ গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ লাগেনি। ওই এলাকায় তিনি ৯০ শতক জমি অন্যের কাছে তিন বছর আগে দুই লাখ ৫৩ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। মরিচ, ফুলকপি বাদে অন্য জমিতে টমেটোর চাষও করেছেন। বর্তমানে টমেটোর সিজনও প্রায় শেষ। এ বছর টমেটোও তিনি লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছেন। তার মতে শীতকালের সবজি ফুলকপি গ্রীষ্মকালে চাষের কোনো তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এ বছরই প্রথম লাগিয়েছে। পরিমিত পরিচর্যাও করতে পারেননি। এবারের ফসল চাষ তার টেস্ট কেস। তবে সাথী ফসল মরিচের সিজন শেষ হলে একই জমিতে তিনি আগামজাতের ধান চাষ করবেন। তার মতে জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব সার পরিমাণ মতো ব্যবহার করলে জমি থেকে তিনটি ফসল বছরে উৎপাদন করা সম্ভব। একই সঙ্গে জমিতে ফসল ফলিয়ে অধিক অর্থ আয়ও করা যায়।

কৃষক মাহতাবের জমিতে গ্রীষ্মকালীন একেকটি ফুলকপি ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রামের ওজন হয়েছে। আগামী বছর যাতে প্রতিটি ফুলকপি শীতকালের মতো ফলানো যায় সেই বিষয়ে তিনি আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষক মাহাতাবের ফুলকপি চাষ দেখে একই ইউনিয়নের বড়দহ গ্রামের বাসিন্দা গনিও ৭৫ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। এমন ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের সংখ্যা আগামী দিনে বাড়বে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ফুলকপি চাষি মাহতাব বলেন, বাজার থেকে এক বীজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফুলকপির বীজ কিনে বপন করে চারা তৈরি করেন। চারা বেড়ে ওঠার একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর জমি প্রস্তুত করে ওই চারা রোপণ করা হয়। প্রথমে ৫০ শতক জমিতে ফুলকপির চারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই গ্রীষ্মকালে ফুলকপির চাষ করতে গিয়ে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ২০ শতক জমির ফুলকপির চারাগাছ মরে যায়। তারপর তিনি অবশিষ্ট ৩০ শতক জমিতে রোপণকৃত চারাগাছ লালন করতে দীর্ঘদিনের কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। সুফলও মিলে। প্রথমবারেই গ্রীষ্মকালে ফুলকপি চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এলাকার মানুষ তা দেখে অনুপ্রাণিত  হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা জানান, কৃষকরা এখন নিজেরাই আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ এ ক্ষেত্রে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে যেন ফুলকপিসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।