ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

খরতাপে কুষ্টিয়ায় ঝুঁকিতে বোরো আবাদ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
খরতাপে কুষ্টিয়ায় ঝুঁকিতে বোরো আবাদ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

কুষ্টিয়া: কদিন ধরে চলা তাপদাহ এবং বিদ্যুৎ সংকটে সেচ নিয়ে চিন্তিত কুষ্টিয়ার চাষিরা। বোরো ধান চাষে সেচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

অতিরিক্ত তাপ এবং মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নির্বিঘ্নে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না বলে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। ইতোমধ্যে বিষয়টি জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভাতেও গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ধার্য থাকলেও সর্বশেষ ধান চাষে অর্জিত হয়েছে ৩৬ হাজার ৩শ হেক্টরে লক্ষ্যমাত্রা উদ্ধৃত্ত হয়েছে। কৃষিবিভাগের হিসেব মতে প্রতি হেক্টর জমিতে গড় ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন এবং চালের হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ২ থেকে ৪ মেট্রিক টন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, উপজেলায় বোরো আবাদ হচ্ছে ১০ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে। সরেজমিন ধানের মাঠের অবস্থা এখন খুবই সংকটাপন্ন এবং ফলন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মাঠে মোট ধানের মধ্যে অর্ধেক ধানের পেটে এখন ফুল ভর্তি আর অর্ধেকের দুধেল অবস্থা। এসময় এসব ধানের মাঠে সার্বক্ষণিক পানির যোগান থাকা অতি জরুরি। কিন্তু চলমান তীব্র তাপদাহ এবং জিকের সেচ সরবরাহ একেবারে তলানিতে পড়ে আছে। এমনকি যেসব চাষিরা নিজেদের মতো করে শ্যালো স্থাপন করে জমিতে সেচ দিত তারাও এখন বিদ্যুৎ সংকটের মুখে ঠিকমতো পানি দিতে পারছে না। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ব্যাপকভাবে ফসলহানির ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
  
আমলা গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেকদিন ধরি জিকি (জিকে) খালের পানি তলানিতে। পাশ আইলির জমিত শ্যালো বোরিং থে পানি নিয়ি আড়াই বিঘে ধান লাগাইছি। আমার ধান এখন পুরা পোয়াতি (গর্ভবতী)। একদিন পানি না দিলিই মাঠ শুকায়ে যায়, যে খড়ানি চলছে, শ্যালো থেকে পানি দেব, তাও দিতি পারছি নে, গত তিনদিন ধইরি কারেন (বিদ্যুৎ) নেই। শ্যালোও চলছে না। ইবার যে কোন বিপদে আল্লাহ ফেলবিনি কিছু বুঝছিনে’।

দৌলতপুর উপজেলার ধান চাষি শরিফুল সেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে জিকের পানি নেই। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের ভিত্তিতে বিএডিসি গভীর নলকুপ স্থাপন করে মাটির নিচে লাইন করে জমিতে পানি দেয়। কিন্তু বিদ্যুৎ ঠিকমতো না পাওয়ায় মোটর চলছে না। পানিও পাচ্ছি না। একেবারে ভরা মৌসুমে পানি বিনে ধান কীভাবে হবে আল্লাহ মালুম’। এভাবে চলতে থাকলে আমার ধান বাঁচাতে আবার ডিজেল ইঞ্জিনের শ্যালোতে পানি তুলতে হবে’।  
  
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এস এম নাসির উদ্দিন বিদ্যুৎ ঘাটতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জাতীয়ভাবেই বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে, জেলার কৃষি অধ্যুষিত সমস্ত এলাকাই পল্লী বিদ্যুতের আওতায়। কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুতের মোট চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে সরবরাহ। আমাদের গড় চাহিদা ১১৫ মেগা ওয়াট হলেও সরবরাহ পাচ্ছি ৬০ মেগা ওয়াটের নিচে। একদিকে তাপদাহের কারণে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বেড়ে গেছে অন্যদিকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে উভয় সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে।

দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ বা জিকে সেচ সরবরাহের ঘাটতির সত্যতা জানিয়ে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ‘জিকে পাম্প হাউজের তিনটি পাম্পের মধ্যে দুইটি পাম্প বিগত ৬ বছর ধরে অকেজো হওয়ায় পাম্প হাউজের একটি পাম্প চালিয়ে চাহিদা পূরনের সুযোগ নেই। আমাদের সেচ সরবরাহ অঞ্চলের জন্য ১৪শ কিউসেক পানির সরবরাহ করার সক্ষমতা থাকলেও পদ্মা নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং একটি মাত্র পাম্প চালিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫শ কিউসেক পানি তুলতে পারছি। সেই সঙ্গে তাপদাহের কারণে পানির প্রবাহ বেশি দূর পর্যন্ত চলমান রাখা যাচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘তীব্র তাপদাহে চলতি বোরো মৌসুমের ধান উৎপাদনকে রক্ষা করতে সোমবার কুষ্টিয়া জেলার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভাতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ ও জিকে পাম্প হাউসকে অধিকরতর সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকেও বাড়তি তদারকি করা হচ্ছে।  
 
কুষ্টিয়ায় টানা ১২তম দিনে তীব্র তাপদাহে তথ্য জানিয়ে কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘কুষ্টিয়াসহ আশপাশের তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৪০.৫ ডিগ্রির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার ছিল ৪১ ডিগ্রি, সোমবার দুপুর আড়াইটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আজও পর্যন্ত সহসা পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।