ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ফোনে ভিডিও দেখে কুল চাষ, মৌসুমে বিক্রি ৯ লাখ

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
ফোনে ভিডিও দেখে কুল চাষ, মৌসুমে বিক্রি ৯ লাখ

কুষ্টিয়া: বেকারত্ব দূর করতে কাজের সন্ধ্যানে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদাত হোসেন (৩৩)। সেখানে টিকতে না পেরে দেশের টানে আবার ফিরে আসেন।

মোবাইলে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে কুল চাষ করে দেখেন সাফল্যের মুখ।

দেশে ফিরে প্রথমে অনেক ভেবেছিলেন কিভাবে নিজে কিছু করা যায়। পরে জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন কুল চাষ। বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে বেশ ভালো সাফল্যও পেয়ে যান তিনি।

সৌদাত কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলকার পাহাড়পুর গ্রামের সলক আলীর ছেলে।

বর্তমানে মাল্টার সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছেন কুল ও পেয়ারা। এর মধ্যে সাত বিঘা জমিতে কুল, সাড়ে চার বিঘা জমিতে মাল্টা ও তিন বিঘা জমিতে আছে পেয়ারা। বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ মূল্যের এসব ফল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি। নানা প্রতিন্ধকতা জয় করে সৌদাত এখন হয়ে উঠেছেন তার গ্রামের রোল মডেল। তার চাষাবাদ দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষে।

সৌদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পড়ালেখা করে চাকুরির পেঁছনে না ছুটে বেকারত্ব দূর করতে কুয়েত গিয়েছিলাম। তবে দেশের প্রতি টানে সেখানে থাকতে পারিনি। সব সময় মনে হতো দেশে গিয়ে এমন কিছু করবো যেটায় আরো কয়েকজনের কর্মসংস্থান হয়। অবসর সময়ে মোবাইলে ইউটিউব ও ফেসবুকে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখতাম। একদিন কুল চাষ দেখে মনে হয় আমিও দেশে গিয়ে কুলের চাষ করবো। তারপর করোনাকালিন সময়ে দেশে চলে আসি। এসেই কুল বাগান তৈরি করি। প্রথমে চার বিঘা জমিতে কুল চাষ করি। এ বছর আরো নতুন করে তিন বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে বল সুন্দরী কুল, দুই বিঘা জমিতে ভারত সুন্দরী এবং এক বিঘা জমিতে রয়েছে কাশ্মেরী সুন্দরী জাতের কুল চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ২০০-২২০টা করে কুলের গাছ আছে। এ বছর গাছ প্রতি গড়ে ২০ কেজি করে ফল পেয়েছি।

চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি জানান, একটু উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না এবং বেলে দোয়াশ মাটিতে কুল বেশি ভালো হয়। চারা লাগানোর ৭-৮ মাস পরেই কুল ধরে। প্রথম বছর একটু ফল কম আসে তবে মাটি ও গাছ ঠিক থাকলে প্রথম বছরেও ভালো ফলন হয়। কুল চাষের ক্ষেত্রে রাসনায়িক সারের চেয়ে জৈব সারটা বেশি ভালো কাজ করে। এছাড়া গাছে ছত্রাকের আক্রমন দেখা দিলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়।

তিনি আরও জানান, দুই সপ্তাহ হলো আমি কুল বিক্রি শুরু করেছি। প্রথমে দামটা বেশ ভালো পেয়েছিলাম তবে এখন একটু কম পাচ্ছি। গত বছর আমি তিন বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। এ বছর আমি ৮-৯ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবো আশা করছি।

নতুন চাষীদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, লেখাপড়া শেষ করে অনেক বেকার যুবকরা চাকরির আশায় না ঘুরে কুল, মাল্টা, পেয়ারা চাষ শুরু করতে পারেন।

স্থানীয় কৃষক রাউচ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় কুল চাষ লাভজনক বেশি। আমাদের এলাকায় তামাকের চাষ বেশি হয়। কিন্তু সৌদাত সেটি না করে বিদেশ থেকে ফিরে কুল চাষ শুরু করে সাফল্য পান। আগামীতে তামাক না হয়ে এই এলাকায় কুল চাষটা বেশি হবে বলে আমি মনে করি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, মিরপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে অনেক বেকার যুবক তাদের বেকারত্ব দূর করছেন। কৃষি অফিস নিয়মিত তাদের পরামর্শ দিয়ে আসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, কুল চাষ খুবই লাভজনক। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলা জুড়ে কুলের বেশ বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক উচ্চ মূল্যের ফল ও ফসল চাষে আমরা মাঠ পর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কুষ্টিয়াসহ যশোর অঞ্চলের ছয়টি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ উপায়ে উচ্চ মূল্যের ফল বাগান তৈরিতে প্রকল্প মেয়াদে কুলসহ ৯টি ফসলের ৬ হাজার ৯৯৬টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের উদ্ধুদ্ব করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় এ জন্য কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।