আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনীতিকে বহুমুখী সংকটে ফেলে রেখে গেছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বটে, তবে এই মুহূর্তে ভ্যাট আরোপ করে স্ববিরোধী নীতিতে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার।
একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আরোপ করেছে।
এতে ব্যাংকের সুদহারও অনেক বেড়েছে। যদিও একটি কৌশল দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে। অন্য হাতিয়ার ভ্যাট দিয়ে আবার মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলছে। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি চলছে তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে নতুন করে ভ্যাটের বোঝা বাড়ানোর সুযোগ নেই।
ব্যবসায়ীরা নানামুখী ব্যয়ের চাপে আছেন, তার ওপর আবার ভ্যাট চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।
এখনো দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। বিনিয়োগ তেমন নেই। বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
নতুন কর্মের সুযোগ না হলে আরো বেশি চাপ তৈরি হবে। প্রতিবছর ১৮ থেকে ২০ লাখ লোক নতুন করে চাকরির বাজারে আসছে। কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থান সীমিত হওয়ায় বেকার জনগোষ্ঠী বেড়ে যাচ্ছে। এই চাপ সামলানোর চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন হবে।
ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবেন কিভাবে? ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার বিদ্যমান।
সংকট থাকায় বিদ্যমান শিল্পে পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। বিদ্যুৎ ঘাটতিতে উৎপাদন ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারখানাভেদে জ্বালানির ব্যবহার ভিন্ন হওয়ায় দেখা যায় কোথাও জ্বালানি তেল নেই, কয়লা নেই ও গ্যাস নেই। কোনোটি দিয়েই কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে না। বিদ্যমান শিল্পের এই সমস্যা সমাধান না করতে পারলে নতুন বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোতে নানামুখী জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখন পদে পদে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
দেশের বিদ্যমান শিল্পের কারখানা সচল রাখা জরুরি। এই কারখানা যেন কোনোভাবে বন্ধ না হয়। এগুলো বন্ধ হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থাহীনতা বাড়বে। এগুলো যেকোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারখানা চালু রাখতে হলে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে ব্যবসায়ীদের দোষত্রুটি আছে তাঁদের বিচার হোক। কিন্তু তাঁদের জেলখানায় আটকে রাখা সমাধান নয়। কারখানা চালাতে গেলে সঠিক ব্যবস্থাপনা লাগবে। আবার অর্থ লাগবে। এই অর্থসংকট কাটাতে সহযোগিতা করা গেলে কারখানা সচল থাকবে। কারখানা চালু থাকলে কর্মসংস্থান ঠিক থাকবে। আবার ঋণ পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই কারখানা চালু রাখার স্বার্থে বিদ্যমান ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হবে। শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এসব সমাধানে যেতে হবে।
লেখক: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি, মাল্টিমুড গ্রুপের চেয়ারম্যান
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫